কক্স-বাজার সমুদ্র সৈকত ভ্রমন- কি ভাবে যাবেন, কি দেখবেন? কোথাই থাকবেন? কত খরচ?

 কক্স-বাজার সমুদ্র সৈকত ভ্রমন:
বাংলাদেশের ভিতরে কোথাও ভ্রমনে চিন্তা করলেই সবার প্রথমে অবশ্যই কক্সবাজারের কথা আসবে মাথাতে। শুধু দেশীয় পর্যটক না, দেশের বাইরে থেকেও প্রতিবছর প্রচুর পর্যটক বিশ্বের সবচাইতে বৃহৎ এই সমুদ্র সৈকত দেখতে আমাদের এই দেশে আছেন। বিস্তীর্ণ বেলাভূমি, সারি সারি ঝাউবন, সৈকতে আছড়ে পড়া বিশাল ঢেউ। সকালবেলা দিগন্তে জলরাশি ভেদকরে রক্তবর্ণের থালার মতো সূর্য। অস্তের সময় দিগন্তের চারিদিকে আরো বেশি স্বপ্নিল রঙ মেখে সে বিদায় জানায়। এসব সৌন্দর্যের পসরা নিয়েই বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে রচনা করেছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। এই কক্সবাজারে শুধু সৈকত নয়, পাশাপাশি রয়েছে আরো বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান। অনেকের সেই তথ্যগুলো জানা না থাকার কারনে এই জায়গাগুলো দেখা হয়নি। তাতে ভ্রমনের মজা অপূর্ণ থেকে যায়। আজকে আমার লেখাতে কক্সবাজারের ভ্রমনের সকল তথ্য দেওয়া চেষ্টা করব। আশা করি, এ পোস্টটি ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য ভ্রমণ গাইড হিসেবে কাজ করবে।
কক্সবাজার সম্পর্কিত কয়েকটি সাধারণ তথ্যঃ
নামকরণঃ
কক্সবাজারের আদি নাম পালংকী। কথিত আছে, ১৭৯৯ সালে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স নামের একজন এখানে এসে একটি বাজার স্থাপন করেন। আর তার নাম অনুসারে কক্স সাহেবের বাজার এবং পরে কক্সবাজার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
সীমানাঃ চট্টগ্রামে অবস্থিত এ জেলার মোট আয়তন ২৪৯১.৮৬ বর্গ কিলোমিটার। কক্সবাজারের উত্তরে চট্টগ্রাম, পূর্বে-বান্দরবান পার্বত্য জেলা ও মিয়ানমার, পশ্চিম ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর।
নদীঃ মোট ৫টি নদী রয়েছে এ জেলাতে। এগুলো হলো- মাতামুহুরী, বাঁকখালী, রেজু, কোহালিয়া ও নাফনদী।
দ্বীপঃ আমরা শুধু সেন্টমার্টিন দ্বীপে গেলেও এখানে আকর্ষণীয় ৫টি দ্বীপ রয়েছে। এগুলো হল- মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিন।
কক্সবাজারের কয়েকটি প্রাচীন নিদর্শণ:
কক্সবাজার ভ্রমণ-5সমুদ্রে ভ্রমণ করতে এসে অনেকেই মাথাতেই রাখিনা কক্সবাজার জেলাতে রয়েছে অনেক প্রাচীন নিদর্শণ। সেগুলো তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করব এখন। যারা কখনও কক্সবাজার যাননি, তারা সেখানে গেলে সমুদ্রের পাশাপাশি এগুলো সময় করে অবশ্যই দেখবেন। যারা কক্সবাজার আগে অনেকবার গিয়েছেন কিন্তু সমুদ্র ছাড়া আর কিছুই দেখা হয়নি, তাদের জন্য এ তথ্যগুলো আফসোস বাড়িয়ে দিবে নিশ্চিত। আফসোস না করে নতুন করে আবার ভ্রমনের প্রস্তুতি নিন, আর চোখ খুলে দেখুন বাংলাদেশের সৌন্দয।
আজগবি মসজিদঃ আজগবি মসজিদটি শাহ সুজার আমলে তৈরি অর্থাৎ ১৬০০ – ১৭০০ খৃস্টাব্দে নির্মিত। স্থানীয়ভাবে এটি চৌধুরী পাড়া মসজিদ হিসেবেও পরিচিত। কক্সবাজার পৌরসভার বিজিবি ক্যাম্পের উত্তরদিকে অবস্থিত। কক্সবাজার পৌরসভার গেইট থেকে রিকশা কিংবা টমটম এ গেলে ভাড়া পড়বে ৩০ টাকা।
প্যাগোড়া (জাদী): কক্সবাজারে রয়েছে অনেক প্যাগোড়া। পুরানো নিদর্শন হিসেবে এগুলো ঘুরে দেখতে পারেন। রাখাইন সম্প্রদায় কর্তৃক কক্সবাজার সদর, রামু ও টেকনাফের পাহাড় বা উচুঁ টিলায় স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে এগুলো নির্মিত হয়। ১৭৯০ সালের দিকে বার্মিজরা আরাকান বিজয়ের পর এগুলো নির্মাণ করা হয়।
বৌদ্ধ ক্যাং: কক্সবাজারে ৭টিরও বেশি বৌদ্ধ ক্যাং রয়েছে। আগ্গা মেধা ক্যাং ও মাহাসিংদোগীক্যাং সবচেয়ে বড়। এসব জায়গাগুলোতে স্থাপিত বৌদ্ধ মূর্তিগুলো দেখার মত এবং ছবি ফ্রেমে বন্দী করে রাখারমত আকর্ষণীয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব বৌদ্ধ পূর্ণিমা, প্রবারণা পূর্ণিমা ও বিষু উৎসব এসব জায়গাতে উদযাপন করা হয়। তাই এসময়গুলোতেই এখানে আসলে বেশি মজা পাবেন।
রামকোট তীর্থধাম: ৯০১ বাংলা সনে স্থাপিত এ তীর্থধামটি রামকোট বনাশ্রমের পার্শ্বের পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। কথিত আছে রাম-সীতা বনবাসকালে এই রামকোটে অবস্থান করেছিলেন। তীর্থধামে মন্দিরের পাশাপাশি আলাদা একটি বৌদ্ধ বিহারে ধ্যানমগ্ন ছোট একটি বৌদ্ধমূর্তিও রয়েছে। জনশ্রুতি আছে, দু’টি ধর্ম পাশাপাশি শান্তিতে সহাবস্থানের প্রমাণ স্বরূপ সম্রাট অশোকের সময়ে এই মূর্তি স্থাপিত হয়।
ছেংখাইব ক্যাং: কক্সবাজারে রামুর শ্রীকুলস্থ বাঁকখালী নদীর তীরে ছেংখাইব ক্যাং (বৌদ্ধ বিহার) অবস্থিত। এখানে অনেক শ্বেত পাথরের মূর্তি এবং নানা রকম নকশাখচিত আসন এবং বিভিন্ন পুরানো নিদর্শন রয়েছে। এ রামু থানাতে ২৩টি বৌদ্ধ বিহারে শতাধিক মূল্যবান বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে।
কানা রাজার সুড়ঙ্গ: শুধু হিন্দু কিংবা বৌদ্ধদের তীর্থস্থান না। এগুলো ছাড়াও রয়েছে আরো অনেক পুরানো নিদর্শণ। উখিয়া থানার জালিয়া পালং ইউনিয়নে পাটুয়ার টেক সৈকতের কাছে নিদানিয়া পাহাড়ের মধ্যে রয়েছে সুড়ঙ্গ বা গর্ত, যাকে কানা রাজার সুড়ঙ্গ বলা হয়। কথিত আছে, জনৈক মগ সম্প্রদায়ের এক চোখ অন্ধ এক রাজার শাসন আমলে আত্মরক্ষার জন্যেএই সুড়ঙ্গটি নির্মাণ করা হয়।
মাথিনের কূপ: মাথিনের অতৃপ্ত প্রেমের ইতিহাসের নীরব সাক্ষী মাথিনের কুপ। টেকনাফথানা প্রাঙ্গণে এ কূপের অবস্থান। এটিও একবার দেখে আসতে পারেন, সময় থাকলে। ১৯৯৪ সালে বাশের তৈরি এ কূপটি সংস্কার করা হয়। এ কূপের কাহিনী নিয়ে কিছুদিন আগে স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে একটি স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে।
মা অষ্টভূজা: মহেশখালী আদিনাথ শিব মন্দিরের পার্শ্বে অষ্টভূজা নামে অপর একটি বিগ্রের মূর্তি রয়েছে। কক্সবাজার কস্তুরা ঘাট হতে নৌযানে ৪৫-৫৫ মিনিট আর স্পিডবোটে ১৫-১৮ মিনিট সময় লাগে। মহেশখালীর গোরকঘাটা জেটি হতে রিকশা যোগে আদিনাথ মন্দির যাওয়া যায়।
পরের পর্বে কক্সবাজারের বিভিন্ন সৈকত এবং দ্বীপ এবং সেই সাথে সেখানকার হোটেল, ট্যুরিজম সংস্থা ও যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পর্কে লেখা থাকবে। সেইসময় পযন্ত অপেক্ষাতে থাকুন। আশা করি, এ লেখাটি সকল ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য অনেক কাজে লাগবে।
বিভিন্ন সৈকত এবং দ্বীপ
কক্সবাজারঃ
কক্সবাজার ভ্রমণ-3বিশ্বের সবচাইতে বড় সমুদ্রসৈকত এটি। সড়কপথে ঢাকা থেকে প্রায় সাড়ে চারশ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম থেকে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার দূরে রয়েছে নয়নাভিরাম এ সমুদ্র সৈকত। এখানকার সমুদ্রের পানিতে বড় বড় ঢেউয়ের মাঝে গোসল, সূর্যাস্তের মনোহারা দৃশ্য সকল পযটকের মূল আকর্ষণ। কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণের শুরুটা হতে পারে লাবনী পয়েন্ট থেকে। সকাল বেলা বের হলে এ সৌন্দর্যের সাথে বাড়তি পাওনা হবে নানান বয়সী জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য। শুধু সমুদ্র সৈকতই নয়, কক্সবাজার শহরের বৌদ্ধ মন্দির, বার্মিজ মার্কেট, হিলটপ রেস্টহাউস ইত্যাদি কক্সবাজার ভ্রমণের অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থান। কক্সবাজারে থাকার জন্য এখন অনেক আধুনিক হোটেল মোটেল রয়েছে। ৪ স্টার হোটেল থেকে শুরু করে কম দামি বিভিন্ন মোটেলও রয়েছে। ২০,০০০টাকার হোটেল যেমন রয়েছে, তেমনি একটু পিছন দিকে মাত্র ৫০০টাকার হোটেলে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
হিমছড়ি
কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই হিমছড়ি। কক্সবাজার থেকে সেখানে ৩ ভাবে যাওয়া যায়। খোলা জীপ, রিকশা কিংবা ব্যাটারী চালিত রিকশাতে করে সেখানে যাওয়া যাবে। খোলা জীপে গেলে জনপ্রতি ভাড়া ৫০-৭০ টাকা পড়বে। রিজার্ভ নিলে এটি পড়বে ১২০০ -১৫০০টাকা।রিকশা করে যেতে হলে ভাড়া লাগবে ১৫০-২৫০ টাকা। আর ব্যাটারি চালিত রিকশায় গেলে আসা যাওয়ার ভাড়া পড়বে ৪০০-৬০০টাকা। এখানে যাওয়ার পথে উপভোগ করতে পারবেন সৈকত লাগোয়া আকাশ ছোঁয়া পাহাড় । হিমছড়ি রয়েছে পাহাড়ের হিম শীতল ঝরণা।
ইনানী সমুদ্র সৈকত
কক্সবাজার ভ্রমণ-4কক্সবাজার থেকে হিমছড়ি পাড় হয়ে আরও ৮কি.মি পূবে রয়েছে আরেক আকর্ষণ সৈকত ইনানী, যাকে বলা হয়, মিনি সেন্টমার্টিন। এখানে রয়েছে বিস্তীর্ণ পাথুরে সৈকত। সমুদ্র থেকে ভেসে এসে এখানকার ভেলাভূমিতে জমা হয়েছে প্রচুর প্রবাল। কক্সবাজার থেকে এখানে পৌছতে রিজার্ভ জীপ নিলে লাগবে ১৮০০-২৫০০ টাকা। ব্যাটারি চালিত রিকশা নিয়েও সারাদিনের জন্য ঘুরলে ভাড়া পড়বে ৮০০-১০০০টাকা।
মহেশখালী দ্বীপ
বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী। এখানে দেখার মূল আকর্ষণ বিখ্যাত আদিনাথ মন্দির । এছাড়াও এখানে রয়েছে খুবই মনোরম একটি বৌদ্ধ মন্দির। আঁকাবাঁকা সিঁড়ি ভেঙ্গে আদিনাথ পাহাড়ের চূড়ায় উঠলেই পাওয়া যাবে বিখ্যাত আদিনাথ মন্দির। এ দ্বীপের দক্ষিণে রয়েছে বিস্তীর্ণ সাগর আর পশ্চিমে বিশাল বিশাল পাহাড়। এখানে থাকার ব্যবস্থা নাই। কক্সবাজার থেকে সকালে গিয়ে এ দ্বীপটি ভালো করে দেখে আবার বিকেলের মধ্যেই ফেরা সম্ভব। কক্সবাজার ট্রলার ঘাট থেকে মহেশখালী যেতে পারেন স্পিড বোটে, সময় লাগবে মাত্র ১৫ মিনিট, সেক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ১৫০ টাকা অথবা ইঞ্জিন বোটে, যেতে লাগবে ১ ঘন্টা, এ ক্ষেত্রে ভাড়া লাগবে ৩০টাকা।
সোনাদিয়া দ্বীপ
কক্সবাজারে আরেকটি আকর্ষণীয় দ্বীপের নাম সোনাদিয়া। শীতে প্রচুর অতিথি পাখির দেখা মেলে এখানে। প্রায় ৪৬৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ দ্বীপটিতে কক্সবাজার থেকে ইঞ্জিন বোটে গিয়ে আবার সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসা সম্ভব।
কুতুবদিয়া
কক্সবাজার জেলার আরেকটি দর্শনীয় স্থান কুতুবদিয়া দ্বীপ, যার আয়তন প্রায় ২১৬ বর্গ কিলোমিটার। এ দ্বীপের দর্শনীয় স্থান হলো বিখ্যাত প্রাচীন বাতিঘর, কালারমা মসজিদ এবং কুতুব আউলিয়ার মাজার। কক্সবাজারের কস্তুরী ঘাট থেকে কুতুবদিয়া স্পিডবোটে মাত্র ৪৫ মিনিটে যাওয়া যায়, যার ভাড়া ১৫০-২০০টাকা কিংবা খরচ বাচাতে যেতে পারেন ইঞ্জিন বোটে। এক্ষেত্রে সময় লাগে ২ ঘন্টার মতো আর ভাড়া ৫০-৭০ টাকা।
টেকনাফ
বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের ভূমি টেকনাফ, কক্সবাজার থেকে যার দূরত্ব প্রায় ৮৫ কি.মি.। টেকনাফ হচ্ছে পাহাড়, নদী আর সমুদ্রের অনণ্য এক মিলনস্থল। চারিদিকে পাহাড় তার পাশদিয়ে বয়ে যাওয়া নাফ নদী। যেকারও ভাল লাগতে বাধ্য। এখানকার সৈকতকে বলা হয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন সৈকত। এখানকার দর্শণীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে, ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ,শাহ পরীর দ্বীপ, কুদুম গুহা, টেকনাফ নেচার পার্ক । কক্সবাজার থেকে বাসে করে টেকনাফে যেতে ভাড়া লাগে ৮০-১২০টাকা অথবা মাইক্রোবাসে করে যেতে ভাড়া লাগে ১০০-১৫০ টাকা।
সেন্টমার্টিন দ্বীপঃ
কক্সবাজার ভ্রমণ-2সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি প্রবাল দ্বীপ। এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মিয়ানমারের উপকূল হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায়। বলে স্থানীয়ভাবে একে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়ে থাকে। এ দ্বীপের আয়তন প্রায় ৮ বর্গকিলোমিটার। দ্বীপে প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল ১৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী উদ্ভিদ ২৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, চার প্রজাতির উভচর ও ১২০ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়। মাছের মধ্যে রয়েছে পরী মাছ, প্রজাপতি মাছ, বোল কোরাল, রাঙ্গা কই, সুঁই মাছ, লাল মাছ, উড়ক্কু মাছ ইত্যাদি। কোনো কোনো পর্যটক ধারণা করেন,সেন্ট মার্টিন বিশ্বের সেরা দ্বীপের একটি। টেকনাফ থেকে জাহাজে করে ২.৫০ ঘন্টা ভ্রমন করে যেতে হয় সেন্টমার্টিনে। জাহাজের আসা-যাওয়ার ভাড়া পড়বে ৯০০-১৫০০টাকা। সেন্টমার্টিনে হোটেল ভাড়া পড়বে ৫০০ – ২০০০টাকা। এখানে গেলে রাত্রিযাপন না করলে আসল মজা পাওয়া যাবেনা। এখানে গিয়ে পযটকরা প্রচুর মাছ এবং ডাব খেয়ে থাকে।
কক্সবাজারে থাকার ব্যবস্থা
কক্সবাজারে রয়েছে পর্যটকের জন্য সাড়ে ৪ শতাধিক আবাসিক হোটেল মোটেল, রিসোর্ট এবং কটেজ। এর মধ্যে কয়েকটির যোগাযোগ নাম্বার দিলাম এখানে। ঢাকা থেকেই ফোন দিয়েই বুকিং দিতে পারেন।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন কর্তৃক পরিচালিত মোটেল শৈবাল (ফোন -০৩৪১-৬৩২৭৪)
তারকা মানের সিগাল হোটেল (ফোন নং-০৩৪১-৬২৪৮০-৯১)
হোটেল সি-প্যালেস (ফান নং-০৩৪১-৬৩৬৯২, ৬৩৭৯২, ৬৩৭৯৪, ৬৩৮২৬)
হোটেল সি-ক্রাউন (০৩৪১-৬৪৭৯৫, ০৩৪১-৬৪৪৭৪, ০১৮১৭ ০৮৯৪২০)
হোটেল মিডিয়া ইন্টারন্যাশনাল (০৩৪১-৬২৮৮১-৮৫ ৬২৮৮১-৮৫)
হোটেল ওসান প্যরাডাইস লি. (০১৯৩৮৮৪৬৭৫৩) উল্লেখ্যযোগ্য।
এখানে এক রাত্রি যাপনের জন্য রয়েছে এক হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা দামের কক্ষ।
যারা থাকার জন্য এত খরচ করতে চাচ্ছেননা, তাদের জন্য কমমূল্যে থাকার হোটেলও রয়েছে। হোটের সীগালের পিছনে রোডে অর্থাৎ কলাতলি রোডের হোটেলগুলোতে মাত্র ৫০০ টাকাতেও থাকা যায়।
কক্সবাজারে যাতায়াত সম্পর্কিত তথ্য:
ঢাকা থেকে সৗদিয়া, এস আলম মার্সিডিজ বেঞ্জ, গ্রিন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, এস.আলম পরিবহন, মডার্ন লাইন, শাহ্ বাহাদুর, সেন্টমার্টিনসহ বিভিন্ন বাসে সব সময় আসা যায়। এতে এসি, নন এসি বাস রয়েছে। ভাড়া পড়বে ৯০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে।
যদি ট্রেনে যেতে চান, তাহলে কমলাপুর থেকে উঠতে হবে।
বিমানেও মাত্র ৪৫ মিনিটে কক্সবাজারে যাওয়া যায়। নিয়মিত কক্সবাজারে বাংলাদেশ বিমান, জিএমজি এয়ার লাইনস, ইউনাইটেড এয়ার ওয়েজসহ অন্যান্য বিমান আসা যাওয়া করে। এক্ষেত্রে ভাড়া হবে ৮ হাজার টাকা।
বেসরকারি ভ্রমণসংস্থা
সব রকম ঝামেলা এড়িয়ে যারা পছন্দের জায়গাটিতে ভ্রমণ করতে চান, তারা সহায়তা নিতে পারেন অভিজ্ঞ কোনো ভ্রমণ সংস্থার। বিভিন্ন বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থা নিয়মিত বিভিন্ন উৎসবকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন ভ্রমণ-গন্তব্যগুলোতে তাদের বিশেষ প্যাকেজের আয়োজন করছে।বাংলাদেশের ভিতরে কোথাও ভ্রমনে চিন্তা করলেই সবার প্রথমে অবশ্যই কক্সবাজারের কথা আসবে মাথাতে। শুধু দেশীয় পর্যটক না, দেশের বাইরে থেকেও প্রতিবছর প্রচুর পর্যটক বিশ্বের সবচাইতে বৃহৎ এই সমুদ্র সৈকত দেখতে আমাদের এই দেশে আছেন। বিস্তীর্ণ বেলাভূমি, সারি সারি ঝাউবন, সৈকতে আছড়ে পড়া বিশাল ঢেউ। সকালবেলা দিগন্তে জলরাশি ভেদকরে রক্তবর্ণের থালার মতো সূর্য। অস্তের সময় দিগন্তের চারিদিকে আরো বেশি স্বপ্নিল রঙ মেখে সে বিদায় জানায়। এসব সৌন্দর্যের পসরা নিয়েই বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে রচনা করেছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। এই কক্সবাজারে শুধু সৈকত নয়, পাশাপাশি রয়েছে আরো বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান। অনেকের সেই তথ্যগুলো জানা না থাকার কারনে এই জায়গাগুলো দেখা হয়নি। তাতে ভ্রমনের মজা অপূর্ণ থেকে যায়। আজকে আমার লেখাতে কক্সবাজারের ভ্রমনের সকল তথ্য দেওয়া চেষ্টা করব। আশা করি, এ পোস্টটি ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য ভ্রমণ গাইড হিসেবে কাজ করবে।
কক্সবাজার সম্পর্কিত কয়েকটি সাধারণ তথ্যঃ
নামকরণঃ
কক্সবাজারের আদি নাম পালংকী। কথিত আছে, ১৭৯৯ সালে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স নামের একজন এখানে এসে একটি বাজার স্থাপন করেন। আর তার নাম অনুসারে কক্স সাহেবের বাজার এবং পরে কক্সবাজার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
সীমানাঃ চট্টগ্রামে অবস্থিত এ জেলার মোট আয়তন ২৪৯১.৮৬ বর্গ কিলোমিটার। কক্সবাজারের উত্তরে চট্টগ্রাম, পূর্বে-বান্দরবান পার্বত্য জেলা ও মিয়ানমার, পশ্চিম ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর।
নদীঃ মোট ৫টি নদী রয়েছে এ জেলাতে। এগুলো হলো- মাতামুহুরী, বাঁকখালী, রেজু, কোহালিয়া ও নাফনদী।
দ্বীপঃ আমরা শুধু সেন্টমার্টিন দ্বীপে গেলেও এখানে আকর্ষণীয় ৫টি দ্বীপ রয়েছে। এগুলো হল- মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিন।
কক্সবাজারের কয়েকটি প্রাচীন নিদর্শণ:
কক্সবাজার ভ্রমণ-5সমুদ্রে ভ্রমণ করতে এসে অনেকেই মাথাতেই রাখিনা কক্সবাজার জেলাতে রয়েছে অনেক প্রাচীন নিদর্শণ। সেগুলো তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করব এখন। যারা কখনও কক্সবাজার যাননি, তারা সেখানে গেলে সমুদ্রের পাশাপাশি এগুলো সময় করে অবশ্যই দেখবেন। যারা কক্সবাজার আগে অনেকবার গিয়েছেন কিন্তু সমুদ্র ছাড়া আর কিছুই দেখা হয়নি, তাদের জন্য এ তথ্যগুলো আফসোস বাড়িয়ে দিবে নিশ্চিত। আফসোস না করে নতুন করে আবার ভ্রমনের প্রস্তুতি নিন, আর চোখ খুলে দেখুন বাংলাদেশের সৌন্দয।
আজগবি মসজিদঃ আজগবি মসজিদটি শাহ সুজার আমলে তৈরি অর্থাৎ ১৬০০ – ১৭০০ খৃস্টাব্দে নির্মিত। স্থানীয়ভাবে এটি চৌধুরী পাড়া মসজিদ হিসেবেও পরিচিত। কক্সবাজার পৌরসভার বিজিবি ক্যাম্পের উত্তরদিকে অবস্থিত। কক্সবাজার পৌরসভার গেইট থেকে রিকশা কিংবা টমটম এ গেলে ভাড়া পড়বে ৩০ টাকা।
প্যাগোড়া (জাদী): কক্সবাজারে রয়েছে অনেক প্যাগোড়া। পুরানো নিদর্শন হিসেবে এগুলো ঘুরে দেখতে পারেন। রাখাইন সম্প্রদায় কর্তৃক কক্সবাজার সদর, রামু ও টেকনাফের পাহাড় বা উচুঁ টিলায় স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে এগুলো নির্মিত হয়। ১৭৯০ সালের দিকে বার্মিজরা আরাকান বিজয়ের পর এগুলো নির্মাণ করা হয়।
বৌদ্ধ ক্যাং: কক্সবাজারে ৭টিরও বেশি বৌদ্ধ ক্যাং রয়েছে। আগ্গা মেধা ক্যাং ও মাহাসিংদোগীক্যাং সবচেয়ে বড়। এসব জায়গাগুলোতে স্থাপিত বৌদ্ধ মূর্তিগুলো দেখার মত এবং ছবি ফ্রেমে বন্দী করে রাখারমত আকর্ষণীয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব বৌদ্ধ পূর্ণিমা, প্রবারণা পূর্ণিমা ও বিষু উৎসব এসব জায়গাতে উদযাপন করা হয়। তাই এসময়গুলোতেই এখানে আসলে বেশি মজা পাবেন।
রামকোট তীর্থধাম: ৯০১ বাংলা সনে স্থাপিত এ তীর্থধামটি রামকোট বনাশ্রমের পার্শ্বের পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। কথিত আছে রাম-সীতা বনবাসকালে এই রামকোটে অবস্থান করেছিলেন। তীর্থধামে মন্দিরের পাশাপাশি আলাদা একটি বৌদ্ধ বিহারে ধ্যানমগ্ন ছোট একটি বৌদ্ধমূর্তিও রয়েছে। জনশ্রুতি আছে, দু’টি ধর্ম পাশাপাশি শান্তিতে সহাবস্থানের প্রমাণ স্বরূপ সম্রাট অশোকের সময়ে এই মূর্তি স্থাপিত হয়।
ছেংখাইব ক্যাং: কক্সবাজারে রামুর শ্রীকুলস্থ বাঁকখালী নদীর তীরে ছেংখাইব ক্যাং (বৌদ্ধ বিহার) অবস্থিত। এখানে অনেক শ্বেত পাথরের মূর্তি এবং নানা রকম নকশাখচিত আসন এবং বিভিন্ন পুরানো নিদর্শন রয়েছে। এ রামু থানাতে ২৩টি বৌদ্ধ বিহারে শতাধিক মূল্যবান বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে।
কানা রাজার সুড়ঙ্গ: শুধু হিন্দু কিংবা বৌদ্ধদের তীর্থস্থান না। এগুলো ছাড়াও রয়েছে আরো অনেক পুরানো নিদর্শণ। উখিয়া থানার জালিয়া পালং ইউনিয়নে পাটুয়ার টেক সৈকতের কাছে নিদানিয়া পাহাড়ের মধ্যে রয়েছে সুড়ঙ্গ বা গর্ত, যাকে কানা রাজার সুড়ঙ্গ বলা হয়। কথিত আছে, জনৈক মগ সম্প্রদায়ের এক চোখ অন্ধ এক রাজার শাসন আমলে আত্মরক্ষার জন্যেএই সুড়ঙ্গটি নির্মাণ করা হয়।
মাথিনের কূপ: মাথিনের অতৃপ্ত প্রেমের ইতিহাসের নীরব সাক্ষী মাথিনের কুপ। টেকনাফথানা প্রাঙ্গণে এ কূপের অবস্থান। এটিও একবার দেখে আসতে পারেন, সময় থাকলে। ১৯৯৪ সালে বাশের তৈরি এ কূপটি সংস্কার করা হয়। এ কূপের কাহিনী নিয়ে কিছুদিন আগে স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে একটি স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে।
মা অষ্টভূজা: মহেশখালী আদিনাথ শিব মন্দিরের পার্শ্বে অষ্টভূজা নামে অপর একটি বিগ্রের মূর্তি রয়েছে। কক্সবাজার কস্তুরা ঘাট হতে নৌযানে ৪৫-৫৫ মিনিট আর স্পিডবোটে ১৫-১৮ মিনিট সময় লাগে। মহেশখালীর গোরকঘাটা জেটি হতে রিকশা যোগে আদিনাথ মন্দির যাওয়া যায়।
পরের পর্বে কক্সবাজারের বিভিন্ন সৈকত এবং দ্বীপ এবং সেই সাথে সেখানকার হোটেল, ট্যুরিজম সংস্থা ও যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পর্কে লেখা থাকবে। সেইসময় পযন্ত অপেক্ষাতে থাকুন। আশা করি, এ লেখাটি সকল ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য অনেক কাজে লাগবে।
বিভিন্ন সৈকত এবং দ্বীপ
কক্সবাজারঃ
কক্সবাজার ভ্রমণ-3বিশ্বের সবচাইতে বড় সমুদ্রসৈকত এটি। সড়কপথে ঢাকা থেকে প্রায় সাড়ে চারশ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম থেকে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার দূরে রয়েছে নয়নাভিরাম এ সমুদ্র সৈকত। এখানকার সমুদ্রের পানিতে বড় বড় ঢেউয়ের মাঝে গোসল, সূর্যাস্তের মনোহারা দৃশ্য সকল পযটকের মূল আকর্ষণ। কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণের শুরুটা হতে পারে লাবনী পয়েন্ট থেকে। সকাল বেলা বের হলে এ সৌন্দর্যের সাথে বাড়তি পাওনা হবে নানান বয়সী জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য। শুধু সমুদ্র সৈকতই নয়, কক্সবাজার শহরের বৌদ্ধ মন্দির, বার্মিজ মার্কেট, হিলটপ রেস্টহাউস ইত্যাদি কক্সবাজার ভ্রমণের অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থান। কক্সবাজারে থাকার জন্য এখন অনেক আধুনিক হোটেল মোটেল রয়েছে। ৪ স্টার হোটেল থেকে শুরু করে কম দামি বিভিন্ন মোটেলও রয়েছে। ২০,০০০টাকার হোটেল যেমন রয়েছে, তেমনি একটু পিছন দিকে মাত্র ৫০০টাকার হোটেলে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
হিমছড়ি
কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই হিমছড়ি। কক্সবাজার থেকে সেখানে ৩ ভাবে যাওয়া যায়। খোলা জীপ, রিকশা কিংবা ব্যাটারী চালিত রিকশাতে করে সেখানে যাওয়া যাবে। খোলা জীপে গেলে জনপ্রতি ভাড়া ৫০-৭০ টাকা পড়বে। রিজার্ভ নিলে এটি পড়বে ১২০০ -১৫০০টাকা।রিকশা করে যেতে হলে ভাড়া লাগবে ১৫০-২৫০ টাকা। আর ব্যাটারি চালিত রিকশায় গেলে আসা যাওয়ার ভাড়া পড়বে ৪০০-৬০০টাকা। এখানে যাওয়ার পথে উপভোগ করতে পারবেন সৈকত লাগোয়া আকাশ ছোঁয়া পাহাড় । হিমছড়ি রয়েছে পাহাড়ের হিম শীতল ঝরণা।
ইনানী সমুদ্র সৈকত
কক্সবাজার ভ্রমণ-4কক্সবাজার থেকে হিমছড়ি পাড় হয়ে আরও ৮কি.মি পূবে রয়েছে আরেক আকর্ষণ সৈকত ইনানী, যাকে বলা হয়, মিনি সেন্টমার্টিন। এখানে রয়েছে বিস্তীর্ণ পাথুরে সৈকত। সমুদ্র থেকে ভেসে এসে এখানকার ভেলাভূমিতে জমা হয়েছে প্রচুর প্রবাল। কক্সবাজার থেকে এখানে পৌছতে রিজার্ভ জীপ নিলে লাগবে ১৮০০-২৫০০ টাকা। ব্যাটারি চালিত রিকশা নিয়েও সারাদিনের জন্য ঘুরলে ভাড়া পড়বে ৮০০-১০০০টাকা।
মহেশখালী দ্বীপ
বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী। এখানে দেখার মূল আকর্ষণ বিখ্যাত আদিনাথ মন্দির । এছাড়াও এখানে রয়েছে খুবই মনোরম একটি বৌদ্ধ মন্দির। আঁকাবাঁকা সিঁড়ি ভেঙ্গে আদিনাথ পাহাড়ের চূড়ায় উঠলেই পাওয়া যাবে বিখ্যাত আদিনাথ মন্দির। এ দ্বীপের দক্ষিণে রয়েছে বিস্তীর্ণ সাগর আর পশ্চিমে বিশাল বিশাল পাহাড়। এখানে থাকার ব্যবস্থা নাই। কক্সবাজার থেকে সকালে গিয়ে এ দ্বীপটি ভালো করে দেখে আবার বিকেলের মধ্যেই ফেরা সম্ভব। কক্সবাজার ট্রলার ঘাট থেকে মহেশখালী যেতে পারেন স্পিড বোটে, সময় লাগবে মাত্র ১৫ মিনিট, সেক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ১৫০ টাকা অথবা ইঞ্জিন বোটে, যেতে লাগবে ১ ঘন্টা, এ ক্ষেত্রে ভাড়া লাগবে ৩০টাকা।
সোনাদিয়া দ্বীপ
কক্সবাজারে আরেকটি আকর্ষণীয় দ্বীপের নাম সোনাদিয়া। শীতে প্রচুর অতিথি পাখির দেখা মেলে এখানে। প্রায় ৪৬৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ দ্বীপটিতে কক্সবাজার থেকে ইঞ্জিন বোটে গিয়ে আবার সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসা সম্ভব।
কুতুবদিয়া
কক্সবাজার জেলার আরেকটি দর্শনীয় স্থান কুতুবদিয়া দ্বীপ, যার আয়তন প্রায় ২১৬ বর্গ কিলোমিটার। এ দ্বীপের দর্শনীয় স্থান হলো বিখ্যাত প্রাচীন বাতিঘর, কালারমা মসজিদ এবং কুতুব আউলিয়ার মাজার। কক্সবাজারের কস্তুরী ঘাট থেকে কুতুবদিয়া স্পিডবোটে মাত্র ৪৫ মিনিটে যাওয়া যায়, যার ভাড়া ১৫০-২০০টাকা কিংবা খরচ বাচাতে যেতে পারেন ইঞ্জিন বোটে। এক্ষেত্রে সময় লাগে ২ ঘন্টার মতো আর ভাড়া ৫০-৭০ টাকা।
টেকনাফ
বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের ভূমি টেকনাফ, কক্সবাজার থেকে যার দূরত্ব প্রায় ৮৫ কি.মি.। টেকনাফ হচ্ছে পাহাড়, নদী আর সমুদ্রের অনণ্য এক মিলনস্থল। চারিদিকে পাহাড় তার পাশদিয়ে বয়ে যাওয়া নাফ নদী। যেকারও ভাল লাগতে বাধ্য। এখানকার সৈকতকে বলা হয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন সৈকত। এখানকার দর্শণীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে, ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ,শাহ পরীর দ্বীপ, কুদুম গুহা, টেকনাফ নেচার পার্ক । কক্সবাজার থেকে বাসে করে টেকনাফে যেতে ভাড়া লাগে ৮০-১২০টাকা অথবা মাইক্রোবাসে করে যেতে ভাড়া লাগে ১০০-১৫০ টাকা।
সেন্টমার্টিন দ্বীপঃ
কক্সবাজার ভ্রমণ-2সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি প্রবাল দ্বীপ। এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মিয়ানমারের উপকূল হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায়। বলে স্থানীয়ভাবে একে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়ে থাকে। এ দ্বীপের আয়তন প্রায় ৮ বর্গকিলোমিটার। দ্বীপে প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল ১৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী উদ্ভিদ ২৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, চার প্রজাতির উভচর ও ১২০ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়। মাছের মধ্যে রয়েছে পরী মাছ, প্রজাপতি মাছ, বোল কোরাল, রাঙ্গা কই, সুঁই মাছ, লাল মাছ, উড়ক্কু মাছ ইত্যাদি। কোনো কোনো পর্যটক ধারণা করেন,সেন্ট মার্টিন বিশ্বের সেরা দ্বীপের একটি। টেকনাফ থেকে জাহাজে করে ২.৫০ ঘন্টা ভ্রমন করে যেতে হয় সেন্টমার্টিনে। জাহাজের আসা-যাওয়ার ভাড়া পড়বে ৯০০-১৫০০টাকা। সেন্টমার্টিনে হোটেল ভাড়া পড়বে ৫০০ – ২০০০টাকা। এখানে গেলে রাত্রিযাপন না করলে আসল মজা পাওয়া যাবেনা। এখানে গিয়ে পযটকরা প্রচুর মাছ এবং ডাব খেয়ে থাকে।
কক্সবাজারে থাকার ব্যবস্থা
কক্সবাজারে রয়েছে পর্যটকের জন্য সাড়ে ৪ শতাধিক আবাসিক হোটেল মোটেল, রিসোর্ট এবং কটেজ। এর মধ্যে কয়েকটির যোগাযোগ নাম্বার দিলাম এখানে। ঢাকা থেকেই ফোন দিয়েই বুকিং দিতে পারেন।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন কর্তৃক পরিচালিত মোটেল শৈবাল (ফোন -০৩৪১-৬৩২৭৪)
তারকা মানের সিগাল হোটেল (ফোন নং-০৩৪১-৬২৪৮০-৯১)
হোটেল সি-প্যালেস (ফান নং-০৩৪১-৬৩৬৯২, ৬৩৭৯২, ৬৩৭৯৪, ৬৩৮২৬)
হোটেল সি-ক্রাউন (০৩৪১-৬৪৭৯৫, ০৩৪১-৬৪৪৭৪, ০১৮১৭ ০৮৯৪২০)
হোটেল মিডিয়া ইন্টারন্যাশনাল (০৩৪১-৬২৮৮১-৮৫ ৬২৮৮১-৮৫)
হোটেল ওসান প্যরাডাইস লি. (০১৯৩৮৮৪৬৭৫৩) উল্লেখ্যযোগ্য।
এখানে এক রাত্রি যাপনের জন্য রয়েছে এক হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা দামের কক্ষ।
যারা থাকার জন্য এত খরচ করতে চাচ্ছেননা, তাদের জন্য কমমূল্যে থাকার হোটেলও রয়েছে। হোটের সীগালের পিছনে রোডে অর্থাৎ কলাতলি রোডের হোটেলগুলোতে মাত্র ৫০০ টাকাতেও থাকা যায়।
কক্সবাজারে যাতায়াত সম্পর্কিত তথ্য:
ঢাকা থেকে সৗদিয়া, এস আলম মার্সিডিজ বেঞ্জ, গ্রিন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, এস.আলম পরিবহন, মডার্ন লাইন, শাহ্ বাহাদুর, সেন্টমার্টিনসহ বিভিন্ন বাসে সব সময় আসা যায়। এতে এসি, নন এসি বাস রয়েছে। ভাড়া পড়বে ৯০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে।
যদি ট্রেনে যেতে চান, তাহলে কমলাপুর থেকে উঠতে হবে।
বিমানেও মাত্র ৪৫ মিনিটে কক্সবাজারে যাওয়া যায়। নিয়মিত কক্সবাজারে বাংলাদেশ বিমান, জিএমজি এয়ার লাইনস, ইউনাইটেড এয়ার ওয়েজসহ অন্যান্য বিমান আসা যাওয়া করে। এক্ষেত্রে ভাড়া হবে ৮ হাজার টাকা।
বেসরকারি ভ্রমণসংস্থা
সব রকম ঝামেলা এড়িয়ে যারা পছন্দের জায়গাটিতে ভ্রমণ করতে চান, তারা সহায়তা নিতে পারেন অভিজ্ঞ কোনো ভ্রমণ সংস্থার। বিভিন্ন বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থা নিয়মিত বিভিন্ন উৎসবকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন ভ্রমণ-গন্তব্যগুলোতে তাদের বিশেষ প্যাকেজের আয়োজন করছে।

0 মন্তব্য(গুলি):