চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থান-chittagong, bangladesh tour

চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থান
চট্টগ্রামের মূল শহরে প্রবেশের পথে বাসে বসেই দেখতে পাবেন সীতাকুণ্ড। এখানে বৌদ্ধমন্দিরে গৌতম বুদ্ধের পায়ের ছাপ রয়েছে। দেখতে পারেন বারো আউলিয়ার মাজার, মিলিটারি একাডেমি, হিন্দু ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে পুরনো ও সুবিশাল তীর্থস্থান কৈবল্যধাম,
ফয়’স লেক 
শহরের পাহাড়তলীতে রয়েছে ঐতিহাসিক ফয়’স লেক। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় তিনশ ফুট উঁচু এ লেকে বছরের সবসময়ই কানায় কানায় জলে পূর্ণ থাকে। চারিদিকে ছোট ছোট অসংখ্য পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে ছড়িয়ে আছে এই লেকের জলরাশি। আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃক ১৯২৪ সালে প্রায় ৩৩৬ একর জায়গায় কৃত্রিম এ হ্রদটি খনন করা হয়। বর্তমানে ফয়’স লেকের সাথে সঙ্গতি রেখে সেখানে কনকর্ড গড়ে তুলেছে এমিউজমেন্ট পার্ক। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সেখানে এখন রয়েছে আধূনিক মানের বিভিন্ন রাইডস। ফয়’স লেকের প্রবেশমুখেই রয়েছে চট্টগ্রাম চিড়িয়া খানা। নানা ধরণের প্রাণী রয়েছে ছোট এই চিড়িয়াখানাটিতে।
ওয়ার সিমেট্রিঃ 
শহরের গোল পাহাড়েরর মোড় থেকে একটু সামনেই আছে রয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ওয়ার সিমেট্রি বা কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দেয়া ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা,নিউজিল্যান্ড, ভারত, মিয়ানমার, পূর্ব এবং পশ্চিম আফ্রিকা, নেদারল্যান্ড ও জাপানের সাতশ সৈনিকের সমাধি আছে এই জায়গাটিতে। দুই ঈদ ছাড়া সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারা বছরই খোলা থাকে এ জায়গাটি।
পাথরঘাটাঃ চট্টগ্রামের প্রধান মৎস্য বন্দর। সমুদ্র থেকে মাছ ধরার ট্রলারগুলো এসে নোঙ্গর করে এখানেই। বিভিন্ন রকম সামুদ্রিক মাছের পসরা দেখতে হলে যেতে হবে এ জায়গাটিতে।
 পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত, 
চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ প্রান্তের সৈকতটির নাম পতেঙ্গা। এটি চট্টগ্রামের সবচেয়ে পর্যটকপ্রিয় ভ্রমণ স্থান। শাহ আমানত বিমান বন্দরের কাছেই এ সৈকতটির অবস্থান। শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার।
পার্কি সমুদ্র সৌকত 
চট্টগ্রাম শহর থেকে “পারকী বীচের” দূরত্ব প্রায় ২৫ কিঃমিঃ। যেতে সময় লাগবে ১ ঘন্টা। এটা মূলত কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। অর্থাৎ কর্ণফুলী নদীর মোহনার পশ্চিম তীরে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈতক এবং পূর্বদক্ষিণ তীরে পারকী সমুদ্র সৈকত। এটি চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ার থানার অর্ন্তগত একটি উপকূলীয় সমুদ্র সৈকত। চট্টগ্রাম সার কারখানা ও কাফকো যাওয়ার পথ ধরে এই সৈকতে যেতে হয়।
কাট্টলী সমুদ্র সৈকত
চট্টগ্রাম শহর থেকে কিছুটা দূরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকতটির নাম কাট্টলী সমুদ্র সৈকত। এর আরেকটি নাম জেলেপাড়া সমুদ্র সৈকত। জায়গাটির নৈসর্গিক সৌন্দর্য সহজেই বিমোহিত করে প্রকৃতিপ্রেমীদের। চট্টগ্রাম শহর থেকে টোল সড়ক ধরে সহজেই পৌঁছুতে পারেন জায়গাটিতে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের একমাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পাশ দিয়েও এ সৈকতে আসা যায়। এ জায়গাটির নাম সাগরিকা সমুদ্র সৈকত।
বোয়ালিয়াকুল সমুদ্র সৈকত
চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২৮ কিলোমিটার উত্তরে বাঁশবাড়িয়া বাজারের পশ্চিম পাশের সড়কটি ধরে প্রায় এক কিলোমিটার এগোলেই বোয়ালিয়াকুল সমুদ্র সৈকত। সমুদ্র তীরে বিশাল ঝাউ বনের পাশে এখানে আছে বিস্তীর্ণ বেলাভূমি। এ সৈকতটির সৌন্দর্যও সহজেই দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম পর্যটকদের। চট্টগ্রাম শহর থেকে বেবি টেক্সি কিংবা বাসে সহজেই আসা যায় জায়গাটিতে। শহরের অলঙ্কার মোড় থেকে সীতাকুণ্ডগামী যেকোনো বাসে উঠে আসতে পারেন।
বাঁশখালী সৈকত
শহর থেকে প্রায় বিশ কিলোমিটার দূরে রয়েছে আরেকটি সুন্দর সমুদ্র সৈকত বাঁশখালী। ঝাউ গাছে ঘেরা দীর্ঘ একটি সমুদ্র সৈকত আছে এখানে। শহরের বহদ্দার হাট থেকে বাসে এসে নামতে হবে মুনছুরিয়া বাজার। সেখান থেকে রিকশায় সুমুদ্র সৈকত। বাসে যেতে সময় লাগে এক ঘণ্টার মতো।
সীতাকুন্ড ইকো পার্ক 
 চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চন্দ্রনাথ রির্জাভ ফরেস্ট ব্লকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সুশোভিত চিরসবুজ বনাঞ্চলে বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক অবস্থিত।এটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৫ কি.মি. উত্তরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং রেলপথের পূর্ব পাশে অবস্থিত।
চট্টগ্রাম শহর হতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে এগুতে থাকলে প্রথমে পাহাড়তলী এবং তারপর একে একে কাট্টলী, সিটি তোরন, কুমিরা অতিক্রম করতে করতে পূর্ব পাশে চোখে পড়বে সুউচ্চ পাহাড়ের উপর চন্দ্রনাথ মন্দির, যার পাদদেশে অবস্থিত বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক।
বাঁশখালী ইকোপার্ক
 প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যমন্ডিত উঁচু-নিচু পাহাড়,লেকের স্বচ্ছ পানি, বনাঞ্চল ও বঙ্গোপসাগরের বিতৃত তটরেখা নিয়ে গঠিত হয়েছে বাঁশখালী ইকোপার্ক। বাঁশখালী উপজেলা সদরের মনছুরিয়া বাজারের ৪ কিলোমিটার পূর্বে এই ইকোপার্কের অবস্থান। প্রকৃতি এখানে বিছিয়ে দিয়েছে তার সৌন্দর্য্যরে চাদর। কোলাহল মুক্ত পরিবেশে বণ্যপ্রাণী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে মাঝে কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে হারিয়ে ফেলার অপূর্ব স্থান বাঁশখালী ইকোপার্ক।
চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
চট্টগ্রাম জেলার লোহাগড়া উপজেলায় অবস্থিত চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশেই এ বনাঞ্চলের অবস্থান। ছোট-বড় পাহাড়ের ঢালে ঢালে চিরসবুজ এ বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রমে ভ্রমণ যেকোনো প্রকৃতিপ্রেমীর কাছেই উপভোগ্য হবে।
১৯৮৬ সালে লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী,চকরিয়া এলাকার সাতটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের প্রায় ১৯ হাজার ১৭৭ একর জায়গা নিয়ে ঘোষণা করা হয় চুনতি সংরক্ষিত এলাকা। ২০০৩ সালে চুনতি অভয়ারণ্যে বন বিভাগের দুটি রেঞ্জ কার্যালয় স্থাপন করা হয়, যার একটি চুনতি রেঞ্জ। এ রেঞ্জের অধীনে আছে বনবিভাগের তিনটি বিট কার্যালয়।
মিরসরাই’র মহামায়া পর্যটন কেন্দ্র 
চট্টগ্রাম শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার উত্তরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ের ঠাকুরদিঘী বাজার থেকে দেড় কিলোমিটর পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে এ স্পটের অবস্থান। নীল আকাশের বিশালতার নিচে সবুজের সমারোহ। এ যেন প্রকৃতির লীলা খেলা। দু’পাশে থাকা বনাঞ্চলের দিকে তাকালে হয়তো সহজেই দেখা যাবে অনেক জীব বৈচিত্র। দেখা যাবে শেষ বিকেলের সূর্যের আলো যখন লেকে পড়ে তখন দূর থেকে মনে হয় পুরো প্রকল্পটির অপরুপ দৃশ্য। এ প্রকল্পটি হতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।
এছাড়াও এশিয়া মহাদেশের দুটি জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের চট্টগ্রামে অবস্থিত জাদুঘরটি,  বাটালি পাহাড়, চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সমাবেশস্থল লালদীঘি ময়দান যেখানে ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলি খেলা হয়। এছাড়াও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকদের একাংশ এখানে সমাধিত্রে ওয়ার সিমেট্রি এবং বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার।
বিখ্যাত খাবারের নাম চট্টগ্রাম, জিইসি মোড়ে ক্যান্ডির জিলাপি।চট্রগ্রামের মেজবানের মাংস,চিটাগাং এর মিষ্টি পান,জামানের চা (আন্দর কিল্লা),ইকবালের সন্দেশ(দেওয়ান বাজার),বোম্বাইয়াওয়ালার ক্ষীর(এনায়েত বাজার)
নদী সমূহ কর্ণফূলী, 
যেভাবে যাবেন : দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা থেকেই সরাসরি চট্টগ্রামের উদ্দেশে বাস ছাড়ে। এস আলম,সৌদিয়া, ভলবো, চ্যালেঞ্জার, দ্রুতি, ইউনিক ইত্যাদি।
কোথায় থাকবেন : চট্টগ্রামে আবাসিক হোটেলগুলোর সিংহভাগই স্টেশন রোডে অবস্থিত। স্টেশন রোড ছাড়াও হোটেল রয়েছে নন্দনকাননে, মাদারবাড়ি,বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদও অন্যান্য এলাকায়।

0 মন্তব্য(গুলি):