Showing posts with label top tourism place in bangladesh. Show all posts
Showing posts with label top tourism place in bangladesh. Show all posts

সুন্দরবন ভ্রমন- কি ভাবে যাবেন, কি দেখবেন? কোথাই থাকবেন? কত খরচ?


কিছুই যখন আর ভালো লাগে না, তখন কোথাও বেড়িয়ে আসা চমৎকার এক পন্থা। আর বেড়াতে যাবার জায়গাটা যদি হয় সুন্দরবনের মত কোন এক স্থান, তবে তো সোনায় সোহাগা।  সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহত ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী সুন্দরবনের আয়তন ৬০১৭ বর্গ কিলোমিটার। বাংলাদেশের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৫১% ভাগই সুন্দরবন। সুন্দরবনে আছে ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৯১ প্রজাতির মাছ এবং ৩১৫ প্রজাতির পাখী। এদের মাঝে রয়াল বেঙ্গল টাইগার, নদীর কুমীর, সামুদ্রিক ডলফিন, কচ্ছপ, শুশুক এবং বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও পাখী বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বন বিভাগ থেকে জানা যায়, সুন্দরবনে ৪৪০টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার, এক থেকে দেড় লাখ হরিণ, ৪০-৫০ হাজার বানর, ২০-২৫ হাজার বন্য শূকর, ১৫০-২০০ কুমীর এবং ২০-২৫ হাজার শুশুক বসবাস করে।

দর্শণীয় স্থান
  • করমজল ফরেষ্ট ষ্টেশন
  • হাড়বাড়িয়া
  • কাটকা
  • হিরণ পয়েন্ট
  • কচিখালী
  • মান্দারবাড়ীয়া
  • টাইগার পয়েন্ট
  • টাইগার পয়েন্ট সি বিচ
  • জামতলা সি বিচ
  • দুবলার চর
  • তিনকোনা দ্বীপ
  • শরণখোলা
  • ছালকাটা
  • কালীরচর
  • মংলা বন্দর
  • সাত নদীর মুখ


যেসব প্রাণী ও গাছ দেখা দেখা যায়
  • রয়েল বেঙ্গল টাইগার (সৌভাগ্যবান হলে)
  • হরিণ
  • কুমিড়
  • বানর
  • বিভিন্ন প্রজাতির পাখি
  • মহিষ
  • সাপ
  • শেয়াল
  • শামুক-ঝিনুক
  • সুন্দরী গাছ
  • কেওড়া গাছ
  • গোলপাতার গাছ
  • মৌমাছির বড় বড় মৌচাক


হীরণ পয়েন্ট

বাংলাদেশের উপকূলবর্তী পাঁচটি জেলা নিয়ে অবস্থিত সুন্দরবন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি। সমুদ্রমূখী সীমানা এই বনভূমি গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের মোহনায় অবস্থিত। ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে। ১৯৯৭ সালে সুন্দরবন ইউনেস্কোকর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়। সুন্দরবনে যতগুলো বৈচিত্রময় স্থান রয়েছে হীরণ পয়েন্ট তার মধ্যে অন্যতম।

দেখতে পাবেন
সুন্দরবনের হীরনপয়েন্টে গিয়ে  কাঠের তৈরি ওয়াকওয়ে ধরে বনের মাঝে হাঁটতে হাঁটতে বানর, হরিণ, গুইসাপ অথবা কুমিরের ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য  দেখা যাবে। হীরণপয়েন্ট ছাড়াও টাইগার পয়েন্ট, বুড়িগোয়ালিনী, হারবাড়িয়া প্রভৃতি এলাকায় ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখাও মিলে যেতে পারে।
অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও জীব-বৈচিত্র্যে ভরপুর বিস্ময়কর সুন্দরবনের হীরণপয়েন্ট দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে বরাবরই প্রিয় 'ট্যুর স্পট'। 'বার্ড ওয়াচিং', 'এ্যাডভেঞ্চার ট্রেকিং', 'ক্যানেল ক্রুজিং' সহ জীবজন্তু দেখা - একসাথে এতো কিছু উপভোগের সুযোগ বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনেই পাওয়া যায়। তাই প্রায় সারা বছর জুড়েই পর্যটকরা ভিড় করে থাকেন, মিশে যান প্রকৃতির এই অনবদ্য সৃষ্টির মাঝে।

কি কি আছে সুন্দরবনে ও হীরণপয়েন্টে
প্রায় ৪৫০টি নদ-নদী ও খাল বিধৌত সুন্দরবনে রয়েছে সুন্দরী, গেওয়া, পশুর, গরান, কাকড়া, বাইন, হেতাল, টাইগার ফার্ন, ছন, গোলপাতাসহ ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা-গুল্ম-লতা-অর্কিড-শৈবাল। বন্যপ্রাণীর বৃহত্তম আবাসস্থল সুন্দরবনে আছে অন্তত ২৬৯ প্রজাতির বন্যপ্রাণী। আছে বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল ও মায়া হরিণ, শুকর, লোনা পানির কুমির, অজগর, রাজগোখরা, কচ্ছপ, উদবিড়াল, বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতী ডলফিনসহ নানা রকম প্রাণী। আছে ১৮৬ প্রজাতির পাখি। ২০০৪ সালের প্রাণী জরিপ অনুযায়ী সে সময়ে সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছিল ৪৪০টি, হরিণ দেড় লাখ, বানর ৫০ হাজার, বন্যশূকর ২৫ হাজার, কুমির ২০০, উদবিড়াল ২৫ হাজার, ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৬ প্রজাতির চিংড়ি, ১৩ প্রজাতির কাঁকড়া, এক প্রজাতির লবস্টার ও ৪২ প্রজাতির মালাস্কা। এ বন থেকে প্রতিবছর মধু আহরিত হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার মণ। ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ইউনেস্কো কমিশন সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে। মৌয়াল, জেলে ও বাওয়ালি মিলে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ তাদের জীবিকার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল।
আকর্ষণীয় ট্যুর স্পট  হীরণপয়েন্ট
সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগের হিরণপয়েন্ট খ্যাত নীলকমল অভয়ারণ্য, শেখেরটেক প্রাচীন মন্দির, সাতক্ষীরা-বুড়িগোয়ালিনীর কলাগাছিয়া ইকোট্যুরিজম সেন্টার, মান্দারবাড়িয়া অভয়ারণ্য- পর্যটকদের জন্য নির্ধারিত স্পটে কুমির প্রজনন, অসুস্থ হরিণের পরিচর্যা, হাজার বছরের পুরোনো স্থাপনার ধ্বংসাবশেষসহ প্রকৃতির অপরূপ সব দৃশ্য উপভোগ করা যায়। হীরণপয়েন্টে  এক থেকে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত কাঠের তৈরি ওয়াকওয়ে ধরে বনের মাঝে হাঁটতে হাঁটতে বানর, হরিণ, গোসাপ, কাঁকড়া অথবা কুমিরের ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্যও দেখতে পাওয়া যায়। 

কাটকা বিচ

বাংলাদেশের উপকূলবর্তী পাঁচটি জেলা নিয়ে অবস্থিত সুন্দরবন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি। সমুদ্রমূখী সীমানা এই বনভূমি গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের মোহনায় অবস্থিত। ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে। ১৯৯৭ সালে সুন্দরবন ইউনেস্কোকর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়। সুন্দরবনে যতগুলো বৈচিত্রময় স্থান রয়েছে কাটকা তার মধ্যে অন্যতম।

দেখতে পাবেন
কাটকাতে ৪০ ফুট উচ্চ একটি টাওয়ার আছে যেখান থেকে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। একটি সুন্দর সমুদ্র সৈকত আছে এখানে। পর্যবেক্ষণ টাওয়ার হতে ফেরার সময় হেঁটে  বীচের সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়।  কাটকা থেকে কাচিখালী (বাঘের জায়গা) পর্যন্ত প্রচুর ঘাস জন্মে বলে অনেক জীবজন্তুর আনাগোনা রয়েছে।  এখানে প্রচুর জীবজন্তও দেখা যায়।

সুন্দরবন জামতলা সৈকত

 

কটকা’র কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান জামতলা। জামতলায় রয়েছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। যেখান থেকে বিস্তীর্ণ ছনক্ষেতে হাজার হাজার হরিণের ছোটাছুটি আবার কখনও রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখা যেতে পারে। কচিখালী আর কটকার ঠিক মধ্যবর্তী স্থানের নাম বাদামতলা। বাদামতলা অত্যন্ত নির্জন এক সমুদ্র সৈকত। এই সৈকতটি জামতলা সৈকত নামেও পরিচিত। সিডরের আঘাতের চিহ্ন এই সবুজে ঘেরা অপরুপ সৌন্দর্যের সৈকতটিতে এখনো দেখা যায়। মংলা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে কচিখালী। সমুদ্র সৈকতের প্রধান আকর্ষণ। কটকার জামতলা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে কচিখালী সমুদ্র সৈকত হয়ে বন বিভাগের কচিখালী স্টেশন পর্যন্ত হাঁটা পথ। এ পথের পাশে ঘন অরণ্যে বাঘ, হরিণ, শূকর, বিষধর সাপ ইত্যাদির এক ছমছম পরিবেশ যা দুঃসাহসী পর্যটকদের জন্য মনোমুগ্ধকর। এ সৈকতে প্রায়ই বাঘের অনাগোনা দেখা যায়।

মান্দারবাড়িয়া সৈকত


মান্দারবাড়িয়ার একদিকে সুন্দরবন অপরদিকে বঙ্গোপসাগরের মায়াবী জলরাশির অবিশ্রান্ত গর্জন যে কোন মানুষকেই দেবে অনির্বচনীয় আনন্দ। মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত প্রকৃতির অপরূপা সুন্দরবন ও উত্তাল বঙ্গোপসাগরের এক রূপসী কন্যা-যা এখনও কিছুটা অনাবিস্কৃত এবং অস্পর্শিত। এখানে দাঁড়িয়ে দেখা যাবে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত। বুড়িগোয়ালিনীর নীলডুমুর থেকে মান্দারবাড়িয়া ৭৫/৮০ কিলোমিটার দুরে। সাতক্ষীরা থেকে বুড়িগোয়ালিনীর দুরত্ব ৭৫ কিলোমিটার। বুড়িগোয়ালিনীর নীলডুমুর পর্যন্ত গাড়ীতে যাওয়া যায়, তার পরের ৭৫/৮০ কিলোমিটার যেতে হবে ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা স্পীড বোটে। এই ৭৫/৮০ কিলোমিটার পথের পুরাটাই সুন্দরবনের বুক চিরে যাওয়া বিভিন্ন নদী।
সুন্দরবনের দক্ষিণে, কটকার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং হিরণ পয়েন্টের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি চর। নাম তার দুবলার চর। কুঙ্গা ও মরা পশুর নদের মাঝে এটি একটি বিচ্ছিন্ন চর। দ্বীপটি মূলত জেলে গ্রাম। মাছ ধরার সঙ্গে চলে শুঁটকি শুকানোর কাজ। লঞ্চ বা ট্রলারে করে শঅথ্য ৬/৭ ঘণ্টা দুরত্ব।
দুবলার চর:
দুবলার চর সুন্দরবনের অন্তর্গত একটি ছোট্ট চর। এই চরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ছোট ছোট নদী; সেসব নদী মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। দুবলার চর একটু ভেতরে অবস্থিত বিধায় কোনো দশনার্থী সহজে এই চরে প্রবেশ করতে পারে না।
দুবলার চরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য অপরূপ মন মাতানো দৃশ্য সব পর্যটককে বিমোহিত করে। দুবলার চরের লোকসংখ্যা প্রায় ৬০০ জন। অধিকাংশই পেশায় মৎস্য শিকারি বা জেলে। অনেকে আবার কাঠ কিংবা বাঁশের ব্যবসাও করে। দুবলার চরের কিছু বাসিন্দা নৌকা চালানোয় খুবই পারদর্শী। তারা পর্যটকদের নৌকায় করে বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখায়। দুবলার চরের চারদিকে রয়েছে অসংখ্য সুন্দরী ও কেওড়া গাছ। যে গাছগুলো তার গভীর মায়া-মমতায় জড়িয়ে রেখেছে দুবলার চরের প্রকৃতিকে। দুবলার চর অন্য যে কারণে বেশি বিখ্যাত তা হলো এর শুঁটকি মাছ। এই চরের শুঁটকি মাছের মধ্যে রয়েছেথ রূপচাঁদা, কোরাল, লইট্যা, ফাইস্যা ইত্যাদি।।

দুবলার চরে রয়েছে বিচিত্র ধরনের প্রাণী ও পশুপাখি। পৃথিবীর অন্যতম আকর্ষণীয় প্রাণী হরিণের বসবাস রয়েছে দুবলার চরে। হরিণগুলো দুবলার চরের গহীনে বাস করে। এ কারণে শিকারিরা সহজে হরিণ শিকার করতে পারে না। ভয়ঙ্কর হলেও সত্য যে, দুবলার চরে রয়েছে ভয়াবহ জলদস্যু। তাই এখানে গেলে যথাযথ নিরাপত্তা নিয়ে এখানে যাওয়া উচিত। কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও দুবলার চর বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক ঐতিহ্য।
সুন্দরবনের দক্ষিণে, কটকার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং হিরণ পয়েন্টের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি চর। নাম তার দুবলার চর। কুঙ্গা ও মরা পশুর নদের মাঝে এটি একটি বিচ্ছিন্ন চর। দ্বীপটি মূলত জেলে গ্রাম। মাছ ধরার সঙ্গে চলে শুঁটকি শুকানোর কাজ। লঞ্চ বা ট্রলারে করে শঅথ্য ৬/৭ ঘণ্টা দুরত্ব।

সুন্দরবন বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বনাঞ্চল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও পারিপাশ্বিক অবস্থার কারণে এই বনের রয়েছে বিশ্বজুড়ে সুনাম। দুবলার চর সুন্দরবনের অন্তর্গত একটি ছোট্ট চর। এই চরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ছোট ছোট নদী; সেসব নদী মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। দুবলার চর একটু ভেতরে অবস্থিত বিধায় কোনো দশনার্থী সহজে এই চরে প্রবেশ করতে পারে না।

দুবলার চরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য অপরূপ মন মাতানো দৃশ্য সব পর্যটককে বিমোহিত করে। দুবলার চরের লোকসংখ্যা প্রায় ৬০০ জন। অধিকাংশই পেশায় মৎস্য শিকারি বা জেলে। অনেকে আবার কাঠ কিংবা বাঁশের ব্যবসাও করে। দুবলার চরের কিছু বাসিন্দা নৌকা চালানোয় খুবই পারদর্শী। তারা পর্যটকদের নৌকায় করে বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখায়। দুবলার চরের চারদিকে রয়েছে অসংখ্য সুন্দরী ও কেওড়া গাছ। যে গাছগুলো তার গভীর মায়া-মমতায় জড়িয়ে রেখেছে দুবলার চরের প্রকৃতিকে। দুবলার চর অন্য যে কারণে বেশি বিখ্যাত তা হলো এর শুঁটকি মাছ। এই চরের শুঁটকি মাছের মধ্যে রয়েছেথ রূপচাঁদা, কোরাল, লইট্যা, ফাইস্যা ইত্যাদি।।

দুবলার চরে রয়েছে বিচিত্র ধরনের প্রাণী ও পশুপাখি। পৃথিবীর অন্যতম আকর্ষণীয় প্রাণী হরিণের বসবাস রয়েছে দুবলার চরে। হরিণগুলো দুবলার চরের গহীনে বাস করে। এ কারণে শিকারিরা সহজে হরিণ শিকার করতে পারে না। ভয়ঙ্কর হলেও সত্য যে, দুবলার চরে রয়েছে ভয়াবহ জলদস্যু। তাই এখানে গেলে যথাযথ নিরাপত্তা নিয়ে এখানে যাওয়া উচিত। কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও দুবলার চর বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক ঐতিহ্য। - See more at: http://www.sharenews24.com/index.php?page=details&nc=46&news_id=42046#sthash.KpiVgIW6.dpuf
সুন্দরবনের দক্ষিণে, কটকার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং হিরণ পয়েন্টের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি চর। নাম তার দুবলার চর। কুঙ্গা ও মরা পশুর নদের মাঝে এটি একটি বিচ্ছিন্ন চর। দ্বীপটি মূলত জেলে গ্রাম। মাছ ধরার সঙ্গে চলে শুঁটকি শুকানোর কাজ। লঞ্চ বা ট্রলারে করে শঅথ্য ৬/৭ ঘণ্টা দুরত্ব।

সুন্দরবন বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বনাঞ্চল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও পারিপাশ্বিক অবস্থার কারণে এই বনের রয়েছে বিশ্বজুড়ে সুনাম। দুবলার চর সুন্দরবনের অন্তর্গত একটি ছোট্ট চর। এই চরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ছোট ছোট নদী; সেসব নদী মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। দুবলার চর একটু ভেতরে অবস্থিত বিধায় কোনো দশনার্থী সহজে এই চরে প্রবেশ করতে পারে না।

দুবলার চরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য অপরূপ মন মাতানো দৃশ্য সব পর্যটককে বিমোহিত করে। দুবলার চরের লোকসংখ্যা প্রায় ৬০০ জন। অধিকাংশই পেশায় মৎস্য শিকারি বা জেলে। অনেকে আবার কাঠ কিংবা বাঁশের ব্যবসাও করে। দুবলার চরের কিছু বাসিন্দা নৌকা চালানোয় খুবই পারদর্শী। তারা পর্যটকদের নৌকায় করে বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখায়। দুবলার চরের চারদিকে রয়েছে অসংখ্য সুন্দরী ও কেওড়া গাছ। যে গাছগুলো তার গভীর মায়া-মমতায় জড়িয়ে রেখেছে দুবলার চরের প্রকৃতিকে। দুবলার চর অন্য যে কারণে বেশি বিখ্যাত তা হলো এর শুঁটকি মাছ। এই চরের শুঁটকি মাছের মধ্যে রয়েছেথ রূপচাঁদা, কোরাল, লইট্যা, ফাইস্যা ইত্যাদি।।

দুবলার চরে রয়েছে বিচিত্র ধরনের প্রাণী ও পশুপাখি। পৃথিবীর অন্যতম আকর্ষণীয় প্রাণী হরিণের বসবাস রয়েছে দুবলার চরে। হরিণগুলো দুবলার চরের গহীনে বাস করে। এ কারণে শিকারিরা সহজে হরিণ শিকার করতে পারে না। ভয়ঙ্কর হলেও সত্য যে, দুবলার চরে রয়েছে ভয়াবহ জলদস্যু। তাই এখানে গেলে যথাযথ নিরাপত্তা নিয়ে এখানে যাওয়া উচিত। কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও দুবলার চর বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক ঐতিহ্য। - See more at: http://www.sharenews24.com/index.php?page=details&nc=46&news_id=42046#sthash.KpiVgIW6.dpuf
সুন্দরবনের দক্ষিণে, কটকার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং হিরণ পয়েন্টের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি চর। নাম তার দুবলার চর। কুঙ্গা ও মরা পশুর নদের মাঝে এটি একটি বিচ্ছিন্ন চর। দ্বীপটি মূলত জেলে গ্রাম। মাছ ধরার সঙ্গে চলে শুঁটকি শুকানোর কাজ। লঞ্চ বা ট্রলারে করে শঅথ্য ৬/৭ ঘণ্টা দুরত্ব।

সুন্দরবন বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বনাঞ্চল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও পারিপাশ্বিক অবস্থার কারণে এই বনের রয়েছে বিশ্বজুড়ে সুনাম। দুবলার চর সুন্দরবনের অন্তর্গত একটি ছোট্ট চর। এই চরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ছোট ছোট নদী; সেসব নদী মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। দুবলার চর একটু ভেতরে অবস্থিত বিধায় কোনো দশনার্থী সহজে এই চরে প্রবেশ করতে পারে না।

দুবলার চরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য অপরূপ মন মাতানো দৃশ্য সব পর্যটককে বিমোহিত করে। দুবলার চরের লোকসংখ্যা প্রায় ৬০০ জন। অধিকাংশই পেশায় মৎস্য শিকারি বা জেলে। অনেকে আবার কাঠ কিংবা বাঁশের ব্যবসাও করে। দুবলার চরের কিছু বাসিন্দা নৌকা চালানোয় খুবই পারদর্শী। তারা পর্যটকদের নৌকায় করে বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখায়। দুবলার চরের চারদিকে রয়েছে অসংখ্য সুন্দরী ও কেওড়া গাছ। যে গাছগুলো তার গভীর মায়া-মমতায় জড়িয়ে রেখেছে দুবলার চরের প্রকৃতিকে। দুবলার চর অন্য যে কারণে বেশি বিখ্যাত তা হলো এর শুঁটকি মাছ। এই চরের শুঁটকি মাছের মধ্যে রয়েছেথ রূপচাঁদা, কোরাল, লইট্যা, ফাইস্যা ইত্যাদি।।

দুবলার চরে রয়েছে বিচিত্র ধরনের প্রাণী ও পশুপাখি। পৃথিবীর অন্যতম আকর্ষণীয় প্রাণী হরিণের বসবাস রয়েছে দুবলার চরে। হরিণগুলো দুবলার চরের গহীনে বাস করে। এ কারণে শিকারিরা সহজে হরিণ শিকার করতে পারে না। ভয়ঙ্কর হলেও সত্য যে, দুবলার চরে রয়েছে ভয়াবহ জলদস্যু। তাই এখানে গেলে যথাযথ নিরাপত্তা নিয়ে এখানে যাওয়া উচিত। কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও দুবলার চর বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক ঐতিহ্য। - See more at: http://www.sharenews24.com/index.php?page=details&nc=46&news_id=42046#sthash.KpiVgIW6.dpuf
সুন্দরবনের দক্ষিণে, কটকার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং হিরণ পয়েন্টের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি চর। নাম তার দুবলার চর। কুঙ্গা ও মরা পশুর নদের মাঝে এটি একটি বিচ্ছিন্ন চর। দ্বীপটি মূলত জেলে গ্রাম। মাছ ধরার সঙ্গে চলে শুঁটকি শুকানোর কাজ। লঞ্চ বা ট্রলারে করে শঅথ্য ৬/৭ ঘণ্টা দুরত্ব।

সুন্দরবন বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বনাঞ্চল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও পারিপাশ্বিক অবস্থার কারণে এই বনের রয়েছে বিশ্বজুড়ে সুনাম। দুবলার চর সুন্দরবনের অন্তর্গত একটি ছোট্ট চর। এই চরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ছোট ছোট নদী; সেসব নদী মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। দুবলার চর একটু ভেতরে অবস্থিত বিধায় কোনো দশনার্থী সহজে এই চরে প্রবেশ করতে পারে না।

দুবলার চরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য অপরূপ মন মাতানো দৃশ্য সব পর্যটককে বিমোহিত করে। দুবলার চরের লোকসংখ্যা প্রায় ৬০০ জন। অধিকাংশই পেশায় মৎস্য শিকারি বা জেলে। অনেকে আবার কাঠ কিংবা বাঁশের ব্যবসাও করে। দুবলার চরের কিছু বাসিন্দা নৌকা চালানোয় খুবই পারদর্শী। তারা পর্যটকদের নৌকায় করে বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখায়। দুবলার চরের চারদিকে রয়েছে অসংখ্য সুন্দরী ও কেওড়া গাছ। যে গাছগুলো তার গভীর মায়া-মমতায় জড়িয়ে রেখেছে দুবলার চরের প্রকৃতিকে। দুবলার চর অন্য যে কারণে বেশি বিখ্যাত তা হলো এর শুঁটকি মাছ। এই চরের শুঁটকি মাছের মধ্যে রয়েছেথ রূপচাঁদা, কোরাল, লইট্যা, ফাইস্যা ইত্যাদি।।

দুবলার চরে রয়েছে বিচিত্র ধরনের প্রাণী ও পশুপাখি। পৃথিবীর অন্যতম আকর্ষণীয় প্রাণী হরিণের বসবাস রয়েছে দুবলার চরে। হরিণগুলো দুবলার চরের গহীনে বাস করে। এ কারণে শিকারিরা সহজে হরিণ শিকার করতে পারে না। ভয়ঙ্কর হলেও সত্য যে, দুবলার চরে রয়েছে ভয়াবহ জলদস্যু। তাই এখানে গেলে যথাযথ নিরাপত্তা নিয়ে এখানে যাওয়া উচিত। কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও দুবলার চর বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক ঐতিহ্য। - See more at: http://www.sharenews24.com/index.php?page=details&nc=46&news_id=42046#sthash.oj85fzq4.dpuf
কিভাবে যাবেন
বছরে সুন্দরবনে গড়ে দুই লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেন। এর মধ্যে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ৩/৪ হাজার। এ খাত থেকে বছরে রাজস্ব আদায় হয় কোটি টাকার উপরে। বর্তমানে ছোট-বড় শতাধিক ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান সুন্দরবনে পর্যটন ব্যবসায় নিয়োজিত। তবে এগুলোর মধ্যে ২০ থেকে ২২টি মাত্র উন্নত সেবা প্রদান করে থাকে। যে কোন ট্যুর কোম্পানির সাথে চুক্তি করে সুন্দরবনে যাওয়া যায়। সুন্দরবনে যাওয়ার পর ট্যুর কোম্পানির লোকদের সহায়তায় কাটকাতে যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে কিংবা কমলাপুর থেকে খুলনা গামী ট্রেনে করে খুলনা গিয়ে সুন্দরবনে যাওয়া যায়। ভাড়া লাগতে পারে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
ট্যুরিস্ট ভেসেল বা নৌযান ছাড়াও সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে হিরণপয়েন্টের নীলকমল এবং টাইগার পয়েন্টের কচিখালী ও কাটকায় বন বিভাগের রেস্টহাউজে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। যার ফি নীলকমলে দেশি পর্যটকদের জন্য প্রতি কক্ষ তিন হাজার টাকা,চার কক্ষ ১২ হাজার টাকা। কচিখালী প্রতি কক্ষ তিন হাজার টাকা, চার কক্ষ ১০ হাজার টাকা। কটকা প্রতি কক্ষ দুই হাজার টাকা, দুই কক্ষ চার হাজার টাকা। বিদেশিদের ক্ষেত্রে নীলকমলে পাঁচ হাজার ও ২০ হাজার টাকা, কচিখালীতে পাঁচ হাজার ও ১৫ হাজার টাকা এবং কাটকায়  পাঁচ হাজার ও ১০ হাজার টাকা। সুন্দরবনের পাশে সাতক্ষীরা শহরে সাধারণ মানের হোটেল ও শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জে এনজিও সুশীলনের রেস্টহাউস ও ডরমেটরিতে একক,পরিবার ও গ্রুপ নিয়ে থাকার সুবিধা রয়েছে। মংলায় আছে পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল,পশুর বন্দরে সাধারণ হোটেল আছে পর্যটকদের থাকার জন্য। খুলনা মহানগরে হোটেল রয়েল,ক্যাসেল সালাম,হোটেল টাইগার গার্ডেন,হোটেল ওয়েস্ট ইন্,হোটেল সিটি ইন,হোটেল মিলিনিয়াম ইত্যাদি মানসম্পন্ন হোটেল ছাড়াও সাধারণ মানের হোটেলে সুন্দরবনে ভ্রমণকারীরা অবস্থান করে থাকেন।
ভ্রমণ ফি 
অভয়ারণ্য এলাকায় প্রত্যেক দেশি পর্যটকের প্রতিদিনের ফি- ১৫০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রী- ৩০ টাকা,বিদেশি পর্যটক-১৫০০ টাকা। অভয়ারণ্যের বাইরে দেশি পর্যটক-৭০ টাকা ও বিদেশি- ১০০০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রী- ২০টাকা,গবেষক-৪০ টাকা। করমজল দেশি ২০ টাকা,বিদেশি ৩০০ টাকা।
যানবাহনের ভাড়া
হেলিকপ্টার/সী প্লেন- এককালীন ৩০ হাজার টাকা,নবায়ন ফি ১০ হাজার টাকা। ১০০ ফুটের ঊর্ধ্বে লঞ্চ ১৫ হাজার টাকা,নবায়ন ফি চার হাজার টাকা,লঞ্চ ৫০ ফুট থেকে ১০০ ফুট এককালীন ১০ হাজার টাকা,নবায়ন ফি তিন হাজার টাকা। ৫০ ফুটের নিচে সাড়ে সাত হাজার টাকা ও নবায়ন ফি আড়াই হাজার টাকা, ট্রলার তিন হাজার টাকা ও নবায়ন- ১৫০০ টাকা। স্পিডবোট পাঁচ হাজার টাকা ও দুই হাজার টাকা। জালিবোট (ট্যুরিস্ট বোট) দুই হাজার টাকা ও এক হাজার টাকা। বন বিভাগের নির্দিষ্ট ভ্রমণ ফি ছাড়াও প্রতিদিন গাইড ফি ৫০০ টাকা, লঞ্চ ক্রু ফি ৭০ টাকা, নিরাপত্তা গার্ড ফি ৩০০ টাকা, টেলিকমিউনিকেশন ফি ২০০ টাকা, ভিডিও ক্যামেরা ফি দেশি পর্যটক ২০০ টাকা এবং বিদেশি পর্যটক ৩০০ টাকা। সুন্দরবনে রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে তীর্থ যাত্রীদের ফি তিন দিনের জন্য জনপ্রতি ৫০ টাকা,অনিবন্ধনকৃত ট্রলার ৮০০ টাকা,নিবন্ধনকৃত ট্রলার ২০০ টাকা এবং ট্রলারের অবস্থান ফি প্রতিদিন ২০০ টাকা।


ঢাকা থেকে যাওয়ার ব্যবস্থা
  • ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন এবং লঞ্চে সরাসরি খুলনা যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
  • এসি এবং ননএসি দুধরনের বাসই চলাচল করে।
  • ঢাকা থেকে সোহাগ পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ এবং ঈগল পরিবহন নিয়মিত চলাচল করে খুলনার উদ্দেশ্য।
  • ভোর ৬ টা  থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত গাড়ীগুলো খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
  • ঢাকা থেকে সড়ক পথে খুলনা পৌছাতে সময় লাগে ৭ ঘন্টা ৪৫ মিনিট।
  • ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন কোম্পানীর লঞ্চ নিয়মিত যাতায়াত করছে খুলনার উদ্দেশ্যে।

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন- কি ভাবে যাবেন, কি দেখবেন? কোথাই থাকবেন? কত খরচ?

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন

সেন্টমার্টিন-4বাংলাদেশঃ সবুজ প্রকৃতি আর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের দেশ বাংলাদেশ। এ দেশের নানান জায়গায় লুকিয়ে আছে নয়নভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এ দেশে একদিকে যেমন রয়েছে সবুজ প্রাকৃতিক দৃশ্যের বন-বনানী আর অন্যদিকে রয়েছে নীল সমুদ্রের হাতছানি।  তেমনি একটি নৈসর্গিক সৌন্দর্যের স্থান হলো সেন্টমার্টিন।
আকাশের নীল আর সমুদ্রের নীল সেখানে মিলেমিশে একাকার, তীরে বাঁধা নৌকা, নান্দনিক নারিকেল বৃক্ষের সারি আর ঢেউয়ের ছন্দে মৃদু হাওয়ার কোমল স্পর্শ-এটি বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপের সৌন্দর্য বর্ণনার ক্ষুদ্র প্রয়াস। বালি, পাথর, প্রবাল কিংবা জীব বৈচিত্র্যের সমন্বয়ে জ্ঞান আর ভ্রমণ পিপাসু মানুষের জন্য অনুপম অবকাশ কেন্দ্র সেন্টমার্টিন।
সেন্টমার্টিন-3স্বচ্ছ পানিতে জেলি ফিশ, হরেক রকমের সামুদ্রিক মাছ, কচ্ছপ, প্রবাল-বিশ্ব রহস্যের জীবন্ত পাঠশালায় পরিণত করেছে সেন্টমার্টিন ও তৎসংলগ্ন এলাকাকে। এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে সাগর বক্ষের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ সেন্টমার্টিন। চারদিকে শুধু পানি আর পানি।
আয়তন ১৭ বর্গ কিলোমিটার। টেকনাফ থেকে ট্রলারে, লঞ্চে কিংবা জাহাজে যেতে লাগে দুই থেকে সোয়া দুই ঘণ্টা। এর জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার। নারিকেল, পেঁয়াজ, মরিচ, টমেটো, ধান এই দ্বীপের প্রধান কৃষিজাত পণ্য।
আর অধিবাসীদের প্রায় সবারই পেশা মৎস্য শিকার। তবে ইদানীং পর্যটন শিল্পের বিকাশের কারণে অনেকেই রেস্টুরেন্ট, আবাসিক হোটেল কিংবা গ্রোসারি শপের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষ নিতান্ত সহজ-সরল, তাদের উষ্ণ আতিথেয়তা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। স্বল্প খরচে পর্যটকদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।
সেন্টমার্টিন-2যেভাবে যাবেন :
বাংলাদেশের যে কোনও স্থান থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে যেতে হবে কক্সবাজার। কক্সবাজার থেকে প্রথমে জিপে চড়ে টেকনাফ, টেকনাফ থেকে সি-ট্রাক, জাহাজ কিংবা ট্রলারে চড়ে পৌঁছাবেন সেন্টমার্টিনে। প্রতিদিন ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় দূরপাল্লার বেশ কিছু গাড়ি। বাসে ভাড়া লাগবে এসি ৬৫০-৭০০ এবং নন-এসি ৩৫০-৪০০ টাকা। কক্সবাজার তো গেলেন তারপর বাসে ১০০-১৩০ টাকা, ট্যাক্সিতে ২৩০-২৪০ টাকা অথবা রিজার্ভ মাইক্রোবাসে সেন্টমার্টিন যেতে ভাড়া লাগবে ১৫০০-২০০০ টাকা (৮-১০ সিট)।
প্রতিদিন সকালথেকে কক্সবাজার-টেকনাফ রুটে চলাচল করে এসব গাড়ি। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন সকাল থেকে আসা-যাওয়া করে সি-ট্রাক, কেয়ারি সিন্দাবাদ এবং নাফসি হাজাজ। চমৎকার এসব জাহাজের পাশাপাশি ট্রলারও চলাচল করে এই সমুদ্র রুটে। পছন্দসই বাহনে যেতে পারেন। তবে নিরাপদ জলযান হিসেবে কেয়ারি সিন্দাবাদ ও নাফসি জাহাজই নির্ভরযোগ্য। এসব জাহাজে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা।
অন্যদিকে প্রতিদিনই বিকাল ৩টায় এসব সাহাজ সেন্টমার্টিন ছেড়ে আসে। শীত মৌসুমে সমুদ্র শান্ত থাকে এবং গ্রীষ্ম-বর্ষা মৌসুমে সমুদ্র উত্তাল থাকে, তখন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ।
সেন্টমার্টিন-1কোথায় খাবেন :
যারা স্বল্প সময়ের জন্য সেন্টমার্টিনে যেতে চান অর্থাৎ সন্ধ্যার আগে ফিরতে চান তাদের অবশ্যই ৩টার আগে ফিরতি জাহাজে আরোহণ করতে হবে। ছোট এই দ্বীপ এলাকা ঘুরে দেখতে ৩ ঘণ্টা সময়ই যথেষ্ট। তবে প্রধান দ্বীপ ও ছেড়া দ্বীপে যারা যেতে চান তাদের হাতে বেশ খানিকটা সময় থাকা উচিত। পর্যটকদের খাবারের জন্য রয়েছে এখানে বেশ কিছু হোটেল ও রেস্তোরাঁ। তার কয়েকটি হল কেয়ারি মারজান রেস্তোরা, বিচ পয়েন্ট।
হোটেল আল্লার দান, বাজার বিচ ।
এছাড়া আসাম হোটেল, সি বিচ, সেন্টমার্টিন, কুমিল্লা রেস্টুরেন্ট, রিয়েল রেস্তোরা, হাজী সেলিম পার্ক, সেন্টমার্টিন টুরিস্ট পার্ক, হোটেল সাদেক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
সেন্টমার্টিনথাকবেন কোথায় :
সেন্টমার্টিনে থাকার জন্য বেশ উন্নতমানের কয়েকটি হোটেল ও কটেজ রয়েছে। ১৬টি হোটেলসহ বেশ ক’টি কটেজে প্রতিরাতে কমপক্ষে ৫০০ জন পর্যটক থাকতে পারেন। অনেক বাড়িতেও আছে পর্যটকদের জন্য থাকার ব্যবস্থা। ভাড়া পড়বে ২০০-২৫০ টাকা, শীত মৌসুমে চাপ বেশি বিধায় ইচ্ছামতো ভাড়া নেয় মালিকরা।
এবার জেনে নিন কয়েকটি হোটেল-মোটেলের নাম ও ঠিকানা :
সীমানা পেরিয়ে : ১০টি রুমের প্রতি রুমে ৪ জন থাকার ব্যবস্থা আছে। ভাড়া রুম প্রতি ৭০০-৮০০ টাকা, তাঁবুতে ৪ জন করে ৩০০ টাকা। খাবার খরচ জনপ্রতি ৫০-৭০ টাকা।
প্রিন্স হেভেন : রুম সংখ্যা ১৮টি, ডাবল রুমের ভাড়া ৬০০-৮০০ টাকা। একসঙ্গে ৪ জনের থাকার ব্যবস্থা। সিঙ্গেল রুমে থাকার ব্যবস্থা দু’জনের ভাড়া ৪০০-৫০০ টাকা। ব্লুমেরিন রিসোর্ট-৩৪টি অতিথি রুমসহ ১৮টি ডাবল বেডরুম। ট্রিপল রেডরুম ১৩, ছয়জনের বেডরুম ৫টি এবং কটেজ ২টি। ভাড়া ডাবল ১০০০ টাকা, ট্রিপল ১২০০ টাকা, ৬ বেড ১৫০০ টাকা, ৫ বেডের কটেজ ২৫০০ টাকা।
সমুদ্র বিলাস (লেখক হুমায়ূন আহমেদের বাড়ি) : ৪ রুমের এই বাড়িতে প্রতি রুমের ভাড়া ৫০০-১০০০ টাকা।
আরও আছে বিচ ক্যাম্প ; হোটেল সাগর পাড়  এবং রিয়াদ গেস্ট হাউজ ।
আছে হোটেল স্বপ্নপ্রবাল, শ্রাবণ বিলাস, সরকারি ব্যবস্থাপনায় মেরিন পার্ক। পর্যটন মৌসুমে প্রায় প্রতি বাড়িতে আবাসিক সুবিধা পাওয়া যায়। সরাসরি এসব বাড়িতে গিয়ে আলাপ করে থাকা যায়।
সেন্টমার্টিনে চিন্তামুক্ত ট্যুর করতে সাহায্য করার জন্য রয়েছে একাধিক ট্যুর কোম্পানি। বিস্তারিত জানতে ই-মেইলে অথবা ফোন করুণ,  Ct Tours & Travels >  ই-মেইলঃ cttourstravels@gmail.com,  মোবাইল: ০১৯৭ ০০ ৮১৮ ৯৭
ভ্রমন বিষয়ক লেখা পাঠান আপনি দেশ-বিদেশে ভ্রমন করেছেন অথবা করবেন। ভ্রমন শেষে আপনার অভিজ্ঞতার কথা লিখে পাঠান। ভ্রমনে যাওয়ার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি, পর্যটন এলাকায় যাওয়ার উপায় ও থাকা-খাওয়ার সুবিধাসহ বিস্তারিত বিবরণ লিখতে ভুলবেন না। পর্যটন এলাকার আকর্ষনীয় ছবিসহ আপনার লেখাটি ১ হাজার শব্দের মধ্যে পাঠালে ভালো হয়। আমরা যত্নসহকারে লেখা প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সাগরকন্যা কুয়াকাটা- কি ভাবে যাবেন, কি দেখবেন? কোথাই থাকবেন? কত খরচ?

সাগরকন্যা কুয়াকাটা

kuakata-bangladesh2কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত::  কুয়াকাটা দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সমুদ্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়। তাই ১৮ কিমি দীর্ঘ এই সৈকতটি বাংলাদেশের এক অমূল্য সম্পদ! আমরা যখন কুয়াকাটায় গেলাম তখন ভরা পূর্ণিমা। এরই মাঝে একদিন ঝুম ঝুম বৃষ্টি নামলো। সূর্যাদয় দেখতে গিয়ে তাই মেঘের চোখ রাঙানি দেখতে হলো। সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করতে না পারলেও প্রকৃতি আমাদের যে রূপ দেখালো তাতেই আমরা বিমুগ্ধ!
বাংলাদেশের দক্ষিণ প্রান্তে সাগরকন্যা খ্যাত অপরূপ এক জায়গা কুয়াকাটা। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপালী ইউনিয়নে অবস্থিত এ জায়গায় আছে বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকত।
একই সৈকত থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখার মতো জায়গা দ্বিতীয়টি আর এদেশে নেই। অনিন্দ্য সুন্দর সমুদ্র সৈকত ছাড়াও কুয়াকাটায় আছে বেড়ানোর মতো আরও নানান আকর্ষণ।
সমুদ্র সৈকত
kuakata-bangladesh1কুয়াকাটার বেলাভূমি বেশ পরিচ্ছন্ন। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এ সৈকত থেকেই কেবল সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। সৈকতের পূর্ব প্রান্তে গঙ্গামতির বাঁক থেকে সূর্যোদয় সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যায়। আর সূর্যাস্ত দেখার উত্তম জায়গা হল কুয়াকাটার পশ্চিম সৈকত।
কুয়াকাটার সৈকত প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ। সৈকত লাগোয়া পুরো জায়গাতেই আছে দীর্ঘ নারিকেল গাছের সারি। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে এ বনেও। বিভিন্ন সময়ে সমুদ্রের জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ভাঙনের কবলে পড়েছে সুন্দর এই নারিকেল বাগান। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে সারা বছরই দেখা মিলবে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য।
শুঁটকি পল্লী
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম প্রান্তে আছে জেলে পল্লী। এখানে প্রচুর জেলেদের বসবাস। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এখানে চলে মূলত শুঁটকি তৈরির কাজ। সমুদ্র থেকে মাছ ধরে এনে সৈকতেই শুঁটকি তৈরি করেন জেলেরা। কম দামে ভালো মানের শুঁটকিও কিনতে পাওয়া যায় এখানে।
গঙ্গামতির জঙ্গল
কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকত শেষ হয়েছে পূর্ব দিকে গঙ্গামতির খালে। এখান থেকেই শুরু হয়েছে গঙ্গামতির জঙ্গল। অনেকে একে গজমতির জঙ্গলও বলে থাকেন। নানান রকম বৃক্ষরাজি ছাড়াও এ জঙ্গলে আছে বিভিন্ন রকম পাখি, বন মোরগ-মুরগি, বানর ইত্যাদি।
ক্রাব আইল্যান্ড
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পূবদিকে গঙ্গামতির জঙ্গল ছাড়িয়ে আরও সামনে গেল আছে ক্রাব আইল্যান্ড বা কাঁকড়ার দ্বীপ। এ জায়গায় আছে লাল কাঁকড়ার বসবাস। নির্জনতা পেলে এ জায়গার সৈকত লাল করে বেড়ায় কাঁকড়ার দল। ভ্রমণ মৌসুমে (অক্টোবর-মার্চ) কুয়াকাট সমুদ্র সৈকত থেকে স্পিড বোটে যাওয়া যায় ক্রাব আইল্যান্ডে।
ফাতরার বন
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম পাশে নদী পার হলেই সুন্দরবনের শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল, নাম তার ফাতরার বন। সুন্দরবনের সব বেশিষ্ট এ বনে থাকলেও নেই তেমন কোন হিংস্র প্রাণী। বন মোরগ, বানর আর নানান পাখি আছে এ বনে। কদাচিৎ এ বনে বুনো শুকরের দেখা মেলে। কুয়াকাটা থেকে ফাতরার বনে যেতে হবে ইঞ্জিন নৌকায়।
কুয়াকাটার কুয়া
kuakata-bangladesh3কুয়াকাটা নামকরণের ইতিহাসের পেছনে যে কুয়া সেটি এখনও টিকে আছে। তবে কয়েক বছর আগে অদূরদর্শী ও কুরুচিকর সংস্কারের ফলে এর সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের কাছে রাখাইনদের বাসস্থল কেরাণিপাড়ার শুরুতেই প্রাচীন কুয়ার অবস্থান।
জনশ্রুতি আছে ১৭৮৪ সালে বর্মী রাজা রাখাইনদের মাতৃভূমি আরাকান দখল করলে বহু রাখাইন জায়গাটি ছেড়ে নৌকাযোগে আশ্রয়ের খোঁজে বেড়িয়ে পড়েন। চলতি পথে তারা বঙ্গোপসাগরের তীরে রাঙ্গাবালি দ্বীপের খোঁজ পেয়ে সেখানে বসতি স্থাপন করেন। সাগরের লোনা জল ব্যবহারের অনুপযোগী বলে মিষ্টি পানির জন্য তার এখানে একটি কূপ খণন করেন। এরপর থেকে জায়গাটি কুয়াকাটা নামে পরিচিতি পায়।
সীমা বৌদ্ধ মন্দির
কুয়াকাটার প্রাচীন কুয়ার সামনেই সীমা বৌদ্ধ মন্দির। কাঠের তৈরি এই মন্দির কয়েক বছর আগে ভেঙে দালান তৈরি করা হয়েছে। তবে মন্দিরের মধ্যে এখনও আছে প্রায় ৩৭ মন ওজনের প্রাচীন অষ্টধাতুর তৈরি বুদ্ধ মূর্তি।
কেরানিপাড়া
সীমা বৌদ্ধ মন্দির থেকে সামনেই ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী রাখানদের আবাসস্থল কেরানিপাড়া। এখানকার রাখাইন নারীদের প্রধান কাজ কাপড় বুণন। রাখাইনদের তৈরি শীতের চাদর বেশ আকর্ষণীয়।
মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির
কুয়াকাটা সৈকত থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সম্প্রদায় রাখাইনদের একটি গ্রামের নাম মিশ্রিপাড়া। এখানে আছে বড় একটি বৌদ্ধ মন্দির। কথিত আছে এ মন্দিরের ভেতরে আছে উপমাহাদেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধ মূর্তি। এছাড়া এখান থেকে সামান্য দূরে আমখোলা গ্রামে আছে এ অঞ্চলে রাখাইনদের সবচেয়ে বড় বসতি।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে নদী ও সড়ক পথে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। সবচেয়ে সহজ যাতায়াত ব্যবস্থা হল ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে পটুয়াখালী, সেখান থেকে বাসে কুয়াকাটা।
ঢাকার সদরঘাট থেকে পটুয়াখালী যায় এমভি পারাবত, এমভি সৈকত, এম ভি সুন্দরবন প্রভৃতি লঞ্চ। ভাড়া প্রথম শ্রেণীর একক কেবিন ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা, দ্বৈত কেবিন ১ হাজার ৮শ’ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা।
কুয়াকাটা আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে কুয়াকাটার বাস সার্ভিস আছে। এছাড়া ঢাকার গাবতলী বাস স্টেশন থেকে সাকুরা পরিবহন, দ্রুতি পরিবহন, সুরভী পরিবহনের বাস যায় কুয়াকাটা। ভাড়া সাড়ে ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা।
এছাড়া কমলাপুর বিআরটিসি ডিপো থেকেও প্রতিদিন সকাল ও রাতে কুয়াকাটার বাস ছাড়ে।
কোথায় থাকবেন
কুয়াকাটায় পর্যটকদের থাকার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল আছে। সবচেয়ে ভালো আবাসন ব্যবস্থা পর্যটন করপোরেশনের ইয়ুথ ইন কুয়াকাটা (০৪৪২৮-৫৬২০৭)। এ হোটেলে ১ হাজার ৫শ’ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিভিন্ন মানের কক্ষ আছে।
এছাড়া এখানে পর্যটন করপোরেশনের অন্য একটি হোটেল হল পর্যটন হলিডে হোম (০৪৪২৮-৫৬০০৪)। এ হোটেলে ৮শ’ ২ হাজার ১শ’ টাকায় কক্ষ আছে। দুটি হোটেলেরই বুকিং দেওয়া যাবে ঢাকায় পর্যটনের প্রধান কার্যালয় থেকে।
এছাড়া কুয়াকাটায় অন্যান্য ভালো মানের হোটেল হল হোটেল বনানী প্যালেস (০৪৪২৮-৫৬০৪২), হোটেল কুয়াকাট ইন (০৪৪২৮-৫৬০৩১), হোটেল নীলাঞ্জনা (০৪৪২৮-৫৬০১৭), হোটেল গোল্ডেন প্যালেস (০৪৪২৮-৫৬০০৫) ইত্যাদি। এসব হোটেলে ৬শ’ থেকে ২ হাজার
সূর্যোদয়ে তুমি, সুর্যাস্তেও তুমি, ও আমার বাংলাদেশ প্রিয় জন্মভূমি…, একিই স্থানে দাঁড়িয়ে সুর্যোদয় আর সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য উপভোগের দারুণ সুযোগ সাগরকন্যা কুয়াকাটায়।

চট্টগ্রাম ভ্রমন- কি ভাবে যাবেন, কি দেখবেন? কোথাই থাকবেন? কত খরচ?


চট্টগ্রাম ভ্রমন- কি ভাবে যাবেন, কি দেখবেন? কোথাই থাকবেন? কত খরচ?
Chittagong-3বাংলাদেশঃ বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম ও ১২ আউলিয়ার শহর চট্টগ্রামে (পূর্ব নাম ইসলামাবাদ) অনেক বার আসা হলেও কেবল আত্মীয় স্বজনদের বাসায় দাওয়াত খেয়ে বা পার্বত্য অঞ্চলে ট্যুরের ট্রানজিট হিসেবে কিছুদিন থেকে ঢাকায় ফিরে এসেছি। তাই এবার রাঙ্গামাটি খাগড়াছড়ি ট্যুর শেষে চট্টগ্রাম এলাম ভ্রমনের উদ্দেশ্য নিয়েই।
চট্টগ্রাম জেলার পর্যটন অঞ্চল/দর্শনীয় স্থান সমূহ :
সীতাকুণ্ড : চট্টগ্রামের মূল শহরে প্রবেশের আগেই সীতাকুণ্ড। বাসে বসেই দেখা যায় সুন্দর কিছু পাহাড়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এ জায়গাটির গুরুত্ব অনেক। রামায়ণে বর্ণিত কাহিনীর অন্যতম পটভূমি সীতাকুণ্ড। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছেও এ স্থান কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এখানে রয়েছে একটি বৌদ্ধমন্দির। বৌদ্ধমন্দিরে গৌতম বৌদ্ধের পায়ের ছাপ রয়েছে। চন্দ্রনাথ মন্দিরটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ সব মানুষের পছন্দের জায়গা। এটি অবস্থিত পাহাড়চূড়ায়। বছরের ফেব্র“য়ারি মাসে সিভা চতুর্দশী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
Chittagong-6বারো আউলিয়ার মাজার : প্রাচীন বাংলায় এ অঞ্চলে ধর্মপ্রচারক হিসেবে আগমন ঘটে বারো ভূঁইয়ার। বারো আউলিয়ার মৃত্যুর পর তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে গড়ে ওঠে বারো আউলিয়া মাজার। মাজারটি রাস্তার পাশেই।
মিলিটারি একাডেমি : বিএমএ বা বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি অবস্থিত ভাটিয়ারিতে। সারাদেশ থেকে আসা নবীন মিলিটারি সদস্যদের এখানেই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
কৈবল্যধাম : চট্টগ্রাম শহরে হিন্দু ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে পুরনো ও সুবিশাল তীর্থস্থান হচ্ছে কৈবল্যধাম। এটি পাহাড়তলী এলাকায় অবস্থিত।
রানী রাসমণি বিচ : প্রায় বছর তিনেক ধরে এটি জমে উঠেছে। পর্যটকরা এ স্পটটির কথা এখনও তেমন একটা জানেন না। মূলত স্থানীয় জনগণ এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষজনই এখানে অবকাশযাপন করতে আসে। কর্ণফুলী নদীর তীরে বিশাল এরিয়া নিয়ে গড়ে উঠেছে এটি। এছাড়া এখানে রয়েছে সুন্দর একটি ঝাউবন।
Chittagong_potenga-sea-beach-njbdnewsপতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত : সমুদ্রপ্রেমীদের কাছে দ্বিতীয় কক্সবাজার হচ্ছে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত। এটি শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে পৌঁছার আগে চোখে পড়বে আনুমানিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তার দুই পাশে ঝাউগাছের সারি।
জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর : এশিয়া মহাদেশের দুটি জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের একটি অবস্থিত চট্টগ্রামে। এটি নগরীর আগ্রাবাদে অবস্থিত। নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। এতে সংরক্ষিত রয়েছে বিভিন্ন উপজাতি জনগোষ্ঠীর জীবনধারা, নানা কৃষ্টি-আচার। আরও রয়েছে ভিনদেশী সংস্কৃতির কিছু নমুনা।
ইকোপার্ক : সীতাকুণ্ড থানার চন্দ্রনাথ পাহাড়ে অবস্থিত ইকোপার্ক। ৯৯৬ একরের এ উঁচু-নিচু পাহাড়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ এবং নানা ধরনের পশুপাখি।
Chittagong-4 

ফয়েসলেকঃ
ফয়’স লেকচট্টগ্রাম:: ফয়’স লেক। পর্যটন নগরী চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্র পাহাড়তলীতে অবস্থিত। এই পর্যটন এলাকাটি বলতে গেলে বিশ্বনন্দিত। প্রায় ৩২০ একর জমির উপর এটি স্থাপিত। পাহাড়ে ঘেরা এই লেকটি আগে ছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। বর্তমানে এই লেকটিকে কনকর্ড নামক বাংলাদেশের এক বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান আরো আধুনিক ও মনোমুগ্ধকরভাবে পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য এটিকে সাজিয়েছেন এবং এর নামকরণ করা হয়েছে ফয়’স লেক কনকর্ড (এমিউজমেন্ট ওয়ার্ল্ড)।
এই ফয়’স লেকের কোলে ঘেষে রয়েছে ছোট্ট একটি চিড়িয়াখানা। আর এই চিড়িয়াখানা ফয়’স লেকের সৌন্দর্য্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ফয়’স লেকের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ যেকোন পর্যটকের মন কেড়ে নেই নিমেষেই।
FoysLake-3পাহাড় আর অরুণাময়ী, গোধূলি, আকাশমণি, মন্দাকিনী, দক্ষিণী ও অলকানন্দা নামের হ্রদ। পার্ক পার হয়ে হ্রদের পাড়ে যেতেই দেখা মিলবে সারি সারি বাধা নৌকা। এখান থেকে নৌকায় যেতে মিনিট দশেক লাগবে। তার পরই দেখা মিলবে চমৎকার রিসোর্ট। নৌকায় করে মিনিট দুয়েক যেতেই বাঁক। তারপর দুই দিকে সবুজ পাহাড়। স্বচ্ছ পানির ওপর ছুটে চলা বিভিন্ন রকমের ইঞ্জিনবোটের শব্দ প্রতিধ্বনিত হয়ে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ের গায়ে এসে যেন আছড়ে পড়ে। মাঝেমধ্যে দু-একটি করে বক এবং নাম না-জানা হরেক রকম পাখি । রয়েছে উন্মুক্তভাবে হরিণ বিচরণের স্থান। সে সময় যদি আকাশ থাকে মেঘলা, কার না ইচ্ছা করবে একটা-দুইটা কবিতার লাইন আওড়াতে? দূরে পরিপাটি কটেজ। হতে পারে রাতযাপন । দোতলা এই কটেজগুলো বাইরে বেশ ছিমছাম, ভেতরটা বিলাসবহুল ও মানসম্মত। আপনার প্রয়োজনের সবকিছুই চাওয়ামাত্র পেয়ে যাবেন। এভাবেই পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে কয়েকটি কটেজ। নৌকায় চড়ে পাহাড়ের গা ঘেঁষে পথচলা। প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম সৌন্দর্য-দুটোকেই অনায়াসে উপভোগ করতে করতে পৌঁছে যাবেন ওয়াটার পার্ক সি ওয়ার্ল্ড কনকর্ডে। পাশেই রয়েছে বিলাসবহুল ভাবে থাকার বন্দোবস্ত। নবদম্পতিদের জন্য রয়েছে হানিমুন কটেজ।
পাহাড়ে ঘেরা আঁকা বাকা মেঠো পথ ধরে যতই সামনের দিকে যায় ততই যেতে ইচ্ছে করে। পিছনে ফিরতে মন চায় না। এই আধুনিক কনকর্ড ফয়’স লেক এ রয়েছে ওয়াটার থিম পার্ক, রিসোর্ট, সি-ওয়ার্ল্ড এবং আরো অনেক আয়োজন। ভ্রমণ প্রেমী যেকেউ একবার এই ফয়’স লেক বেড়াতে আসলে তার বার বার আসতে ইচ্ছে করবেই। পর্যটকরা সাথে করে বাইনাকুলার নিয়ে আসলে পাহাড়ের চূড়া হতে পুরো চট্টগ্রামকে দেখতে পারে এক জায়গায় দাঁড়িয়েই। সাথে তো প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং প্রাকৃতিক লেক আছেই। এই লেকটি আসলে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নির্মাণ করেন ১৯২৪ সালে। আর তৎকালীন রেলওয়ে প্রকৌশলী জনাব ফয় এর নামে নামকরণ করা হয়। সেই থেকে আজ অবধি চট্টগ্রামের এই প্রাণকেন্দ্র ফয়’স লেক সার্বক্ষণিক পর্যটকদের পদচারনায় বিকশিত হচ্ছে দিন দিন। বাংলাদেশী যারা ভ্রমণ পিয়াসু আছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে না গিয়ে দেশটাকে দেখুন, দেশের সৌন্দর্য্য অনুধাবন করুন, আমাদের এই ক্ষুদ্র দেশটিকে বিশ্ব দরবারে পর্যটনের দেশ হিসেবে পরিচিত করুন।
Foy’s Lakeবিনোদনের জন্য থিম পার্ক ফয়’স লেক কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট ওয়ার্ল্ডে আছে বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক মানের রাইডস যেমন—সার্কাস ট্রেন, ফ্যামিলি কোস্টার, ফেরিস হুইল, রেডড্রাই স্লাইড, বাম্পার কার, সার্কাস সুইং, স্পিডবোট, ওয়াটার বি। লেকের ওপর ঝুলন্ত সেতু, পাহাড়ের বনাঞ্চলে ট্রাকিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, সুউচ্চ টাওয়ার।
অবস্থান
পাহারতলি, নাসিরাবাদ, চট্টগ্রাম
কিভাবে যাবেন সেখানে
ফয়’স লেক, খুজে পাবেন চট্টগ্রাম শহরের মাঝে পাহাড়তলী এলাকায় । নিজস্ব গাড়ী না থাকলে অটো রিক্সা কিংবা সিএনজি করে ৩০ মিনিটেই চলে যেতে পারেন ফয়’স লেকে।
কোথায় থাকবেন
Foy’s Lakeরয়েছে ফয়’স লেকের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আপনার জন্য আছে বিলাসবহুল থাকার বন্দোবস্ত। পাহাড়ের ধারে লেকের পাড়ে রয়েছে দারুন সব কটেজ ও রিসোর্ট। নবদম্পতিদের জন্য রয়েছে হানিমুন কটেজ। রিসোর্টে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন রকমের সুবিধা, যেমন-প্রতিদিনের সকালের নাশতা, থিম পার্ক ফয়’স লেক কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট ওয়ার্ল্ড রাইডসগুলো উপভোগ করার সুযোগ এবং দিনভর জলে ভিজে আনন্দ করার জন্য ওয়াটার পার্ক সি ওয়ার্ল্ড কনকর্ড। তা ছাড়া করপোরেট গ্রাহকদের জন্য সভা, বার্ষিক সাধারণ সভা এবং বিভিন্ন রকম ইভেন্টের সুবিধা রয়েছে। অবশ্য ইচ্ছা করলে অন্য আবাসিক হোটেলে থেকেও আপনি ফয়’স লেক ঘুরে দেখতে পারেন।যাঁরা চট্টগ্রামে এসে ফয়’স লেকে থাকতে চান, তাঁদের ঢাকা অফিস থেকে যোগাযোগ করে ফয়’স লেক রিসোর্টে বুকিং দিয়ে আসাই ভালো। ফোন: ০১৯১৩৫৩১৪৮৩, ০১৯১৩৫৩১৪৮০, (০৩১) ২৫৬৬০৮০, ফ্যাক্স: (০৩১) ৬৫৯৪০৬।
প্রবেশমূল্য
Foy’s Lakeখরচটা হাতের নাগালেই। থিম পার্ক ফয়’স লেক কনকর্ড অ্যামাউজমেন্ট ওয়ার্ল্ডে প্রবেশসহ সব রাইড ২০০ টাকা, ওয়াটার পার্ক সি ওয়ার্ল্ড কনকর্ড প্রবেশসহ সব রাইড ৩৫০ টাকা। ফয়’স লেক রিসোর্টে প্রতিদিন রাত যাপন ২৫০০ থেকে ৭০০০ টাকা এবং রিসোর্ট বাংলোয় প্রতিদিন রাত যাপন ২৫০০ থেকে ৬০০০ টাকা।
পরিবার নিয়ে অন্যরকম একটি রাত কাটাতে চাইলে উঠতে পারেন রিসোর্ট কিংবা বাংলোতে। ওয়াটার পার্ক সি ওয়ার্ল্ডের লাগোয়া রিসোর্টে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হ্রদমুখী ও পাহাড়মুখী কক্ষ। যেখান থেকে উপভোগ করা যাবে হ্রদ ও পাহাড়ের অপার সৌন্দর্য। আবার প্রকৃতি ও আধুনিকতার সমন্বয়ে পাহাড়ের কোলে গড়ে তোলা ফয়’স লেকের বাংলোও মনোরম এক স্থান।
রিসোর্ট ও বাংলোয় আগত পর্যটকদের খাওয়া-দাওয়ার জন্য দিন-রাত চবি্বশ ঘণ্টা খোলা থাকে রেস্টুরেন্ট। এখানে দিনের বেলায় শুনতে পাওয়া যায় পাখির ডাক। আর রাতের সৌন্দর্য সে তো চোখে না দেখলে বোঝানোর নয়। এ সৌন্দর্য পাগল করে তোলে আগতদের।

বাঁশখালী ইকোপার্ক, শীতের পাখি

বাঁশখালী ইকোপার্কচট্টগ্রাম:  বাংলাদেশের সর্বত্র ইতিহাস-ঐতিহ্য সংবলিত ও পর্যটক আকর্ষণ করার মতো বহু নিদর্শন রয়েছে। কিন্তু একই উপজেলায় একসঙ্গে অনেক কিছু-এরকম উপজেলা হাতেগোনা কয়েকটি। সেসব উপজেলার মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রামের বাঁশখালী। আরণ্যক সৌন্দর্যমণ্ডিত বাঁশখালীতে কী নেই। পাহাড়, সাগর, বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য, ঝাউবন, মিনি সমুদ্রবন্দর—সবই আছে বাঁশখালীতে। তারপরও আশানুরূপ পর্যটক টানতে পারে না। বাঁশখালীর নানা সম্ভাবনা নিয়ে চারিদিকে দেখচাহি’র আমাদের আজকের আয়োজন।
আঁকাবাঁকা পাহাড়ি সড়ক, চারপাশে ঘন সবুজের সমারোহ, বন্যহাতির বিচরণ, চেনা-অচেনা পাখির মন-মাতানো কিচিরমিচির শব্দ, দেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু, সুউচ্চ টাওয়ার—কী নেই এখানে। হ্যাঁ, বলছিলাম চট্টগ্রামের বাঁশখালীর কথা। বহুমুখী আরণ্যক সৌন্দর্য ও নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী পর্যটকদের কাছে টানে। বাংলাদেশে এমন উপজেলা হাতেগোনা দু’একটি, যেখানে পর্যটক আকর্ষণের অসংখ্য নিদর্শনে ভরপুর।
বাঁশখালী ইকোপার্ক-2পাহাড়, সমুদ্র, নদী, খাল ও সমতলভূমি বেষ্টিত এ উপজেলায় রয়েছে ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বালুচরসমৃদ্ধ সমুদ্র সৈকত, ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ পাহাড়ি হ্রদ ও প্রাকৃতিক চিড়িয়াখানা সংবলিত নানা জীববৈচিত্র্যের হৃদয়ছোঁয়া ইকোপার্ক, ৩৬৬২ একরজুড়ে চাঁনপুর-বৈলগাঁও চা বাগান, সমুদ্র মোহনায় খাটখালী মিনি সমুদ্রবন্দর, সামুদ্রিক মত্স্য আহরণ ও চিংড়ি চাষের দৃশ্য, পানি থেকে লবণ চাষের দৃশ্য, নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন, পুরাকীর্তি, ঐতিহাসিক মসজিদ, মন্দির, কেয়াং এবং আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, দরবেশ-আউলিয়া ও সাধু-সন্ন্যাসীদের তীর্থভূমি এই বাঁশখালী। এই উপজেলাটি কক্সবাজার জেলার সঙ্গে লাগোয়া।
অদূর ভবিষ্যতে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্ব কমিয়ে বাঁশখালীর ওপর দিয়ে কক্সবাজার দেশ-বিদেশের পর্যটকরা যাতায়াত করবে। সে জন্য চট্টগ্রাম থেকে বাঁশখালী হয়ে কক্সবাজার মহাসড়কের কাজ প্রায় শেষের পথে।
এদিকে, শীত মৌসুমকে সামনে রেখে পর্যটন স্পট বাঁশখালী ইকোপার্কে আসেন দর্শনার্থীর । দক্ষিণ চট্টগ্রামের এই পর্যটন স্পটটিতে ২০০৩ সাল থেকে পর্যটকদের আগমন শুরু হয়।
বাঁশখালী ইকোপার্ক-3প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যমন্ডিত উঁচু-নিচু পাহাড়, লেকের স্বচ্ছ পানি, বনাঞ্চল ও বঙ্গোপসাগরের বিতৃত তটরেখা নিয়ে গঠিত হয়েছে বাঁশখালী ইকোপার্ক। বাঁশখালী উপজেলা সদরের মনছুরিয়া বাজারের ৪ কিলোমিটার পূর্বে এই ইকোপার্কের অবস্থান। প্রকৃতি এখানে বিছিয়ে দিয়েছে তার সৌন্দর্য্যরে চাদর। কোলাহল মুক্ত পরিবেশে বণ্যপ্রাণী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে মাঝে কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে হারিয়ে ফেলার অপূর্ব স্থান বাঁশখালী ইকোপার্ক।
এটি যেন প্রকৃতির একখন্ড স্বর্গ ভূমি। চট্টগ্রামসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলার সাথে এ পার্কের যাতায়াতের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে না উঠলেও মৌসুমের শুরুতেই পর্যটকদের ঢল নামে বাঁশখালী ইকোপার্কে। এখানে মিলবে সবুজ ঘনবন আর নানারকম পশু-পাখি ও বন্য প্রাণীর রোমাঞ্চকর সব দৃশ্য। যেন সে এক রহস্যময় জগৎ।
পার্কে এখন শোভা পাচ্ছে ৮৫ প্রজাতির পাখি, ৪৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২৫ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৭ প্রজাতির উভচর প্রাণী। ১৯৯৭ সালের উদ্ভিদ জরিপ মতে এখানে আরো পাওয়া যাবে ৩১০ প্রজাতির উদ্ভিদ। এর মধ্যে ১৮ প্রজাতির দীর্ঘ বৃক্ষ, ১২ প্রজাতির মাঝারি বৃক্ষ, ১৬ প্রজাতির বেতসহ অসংখ্য অর্কিড, ইপিফাইট ও ঘাস জাতীয় গাছ।
বাঁশখালী ইকোপার্কএসব ছাড়াও পার্কের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন নানা শ্রেণীর পর্যটকরা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ইকোপার্ককে নিয়ে বিতৃত পরিকল্পনা নিলে পর্যটন কেন্দ্রটি জাতীয়ভাবে প্রতিনিধিত্বশীল হয়ে উঠতে পারবে।
সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ, চিরসবুজ বনাঞ্চল ও প্রাণীকূলের এসব অপরূপ সৌন্দর্য পূর্ণমাত্রায় উপভোগ করার সুবিধার্থে দর্শনার্থীদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে দুটি সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। টাওয়ারের চূড়ায় উঠলে অনায়াসে দেখতে পাবেন কুতুবদিয়া চ্যানেল, বঙ্গোপসাগর ও চুনতি অভয়ারণ্যের বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল।
প্রতি বছরের  শীত মৌসুমে এখানে প্রচুর দর্শনার্থীর ভিড় লক্ষ্য করা যায়। একই সাথে সমুদ্র উপকূলীয় বাহারছড়া ও খানখানবাদ ঝাউবাগানেও পর্যটক আগমন শুরু হয়েছে। ইকোপার্কের সবুজ বনে পাখির কিচিমিচি শব্দ, পশু-পাখির বিচরণ, এলোমেলো অসংখ্য লেক, আঁকাবাকা রাস্তা, ঝুলন্ত ব্রীজ আর টাওয়ার হতে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখতে পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছে।
২০০৮ সালে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে পার্কের বামের ছড়ার বাঁধ ভেঙে বেশ কিছু স্থাপনা ও হাইড্রোইলেক্ট্রনিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি তছনছ হয়ে যায়। এ সময় ইকোপার্কের বেশ কিছু স্থাপনা ভেঙে গেলে পর্যটকের সংখ্যা কিছুতা হ্রাস পায়। তবে শীত মৌসুম ও বিভিন্ন উৎসবে পর্যটকের আনোগোনা থাকে চোখে পড়ার মতো।
পর্যটকরা জানান, বাঁশখালী এলাকায় পরিবার সদস্যদের নিয়ে বিনোদনের তেমন কোন স্থান নেই। খোলামেলা পরিবেশের এই ইকোপার্কটি ঘুরে ফিরে সময় কাটানো যায়। শিশুরাও দোলনায় চড়ে ও ঝুলন্ত সেতু দেখে খুব খুশি। পাখির কিচির-মিচির শব্দে ভ্রমণ পিপাসুদের মন উৎফুল্ল হয়।
প্রতি বছর ঈদে ও শীত মৌসুমে সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে পর্যটকদের আগমন আরো বাড়বে বলে মনে করে দর্শনার্থীরা।
বাঁশখালী ইকোপার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন জানান, শীত মৌসুম ও অতিথি পাখি আসায় বর্তমানে পর্যটকরা আসা শুরু করেছেন। ফলে আগের চেয়ে উৎসব মুখর পর্যটন স্পটটি। সুশৃংখলাভাবে পর্যটকরা যাতে ঘুরে বেড়াতে পারে সে জন্য বন বিভাগ থেকে সব ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
এদিকে ইকোপার্কে যাওয়ার একমাত্র সড়কটি সরু এবং জ্বরাজীর্ণ হওয়ায় পর্যটক সহ সাধারণ যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। ইকোপার্কেটিতে নেই উন্নত কোন খাবর হোটেল।
অবস্থানঃ
বাঁশখালী ইকোপার্কটির অবস্থান উপজেলা সদর জলদি নেমে মনছুরিয়া বাজার থেকে ৪ কিলোমিটার পূর্বে।
যেভাবে যেতে হবেঃ 
চট্টগ্রাম থেকে এখানে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ। চট্টগ্রাম শহর থেকে বাঁশখালীর দূরুত্ব মাত্র ৪৫ কিলোমিটার। বাসে যেতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে। বাস ভাড়া জনপ্রতি ৫০ থেকে ৮০ টাকা। সিএনজি ভাড়া ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। সময় লাগবে প্রায় আড়াই ঘণ্টা।


web

রাঙ্গুনীয়ায় দেশের একমাত্র পক্ষীশালা

পক্ষীশালা-2চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার হোছনাবাদ ইউনিয়নের জঙ্গল নিচিন্তাপুর পাহাড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে দেশের প্রথম ও একমাত্র অ্যাভিয়ারি অ্যান্ড রিক্রিয়েশন পার্ক (পক্ষীশালা ও বিনোদন কেন্দ্র) । দেশে দীর্ঘতম ২ কিলোমিটার পাহাড় বিস্তৃতি ক্যাবল কার স্থাপন হল এ পার্কে।
পার্কটির নামকরণ হয়েছে ‘শেখ রাসেল অ্যাভিয়ারি অ্যান্ড রিক্রিয়েশন পার্ক’।
পক্ষীশালা-6
ছবিঃ A.m. Emon
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের কোদালা বন বিটের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৫৫০ একর বনভূমিতে অ্যাভিয়ারি অ্যান্ড রিক্রিয়েশন পার্ক গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। সারা বিশ্বের মধ্যে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় রয়েছে এ ধরনের পার্ক।
ছবিঃ A.m. Emon
ছবিঃ A.m. Emon
এটি এমন একটি পার্ক যেখানে শুধু পাখি ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণের জন্য একটি অভয়ারণ্যভিত্তিক বৃক্ষ আচ্ছাদিত সবুজ পাহাড়ি বন আছে। এখানে হাজার হাজার বুনো পাখি উড়ে বেড়ায়। তাদের কলতানে মুখরিত হবে সবুজ বন। আর বুনোপথে ঘুরে বেড়াবে বিনোদনপ্রেমী মানুষ। আকাশ পথে ক্যাবল কারে চড়ে দেখেেব নিচের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।’
পার্কের অভ্যন্তরে অন্যান্য বৃক্ষের পাশাপাশি বট, অশ্বথ, পাকুর, আমলকী, ডুমুর, ইত্যাদি পাখি খাদ্য ও বিভিন্ন ফল-ফলাদির বৃক্ষ চারা বনায়নে বাগান সৃজন এবং পাখিকুলের প্রাকৃতিক খাদ্যের ব্যবস্থার মাধ্যমে পাখিদের অভয়ারণ্যের পরিবেশ সৃষ্টি করা  হয়েছে।
পক্ষীশালা-5চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগ সুত্র জানায়, পার্কের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি এবং পাখিদের জন্য প্রয়োজনীয় পানির ব্যবস্থা করতে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের সেগুন বাগান এলাকায় বন বিভাগের জমিতে খনন করা হয়েছে কৃত্রিম লেক।
পাখিকুলের পানীয়, স্নান এবং আহার-বিহারে পানির ব্যবহারসহ প্রকৃতি ও পাখিদের জীবনধারার অপরূপ দৃশ্যের অবতারণা হয় এই লেকে।
সড়ক আর বনাঞ্চলের মাঝখানে দ্বীপ সমেত কৃত্রিম লেকের দারুণ উপভোগ্য এই দৃশ্য আকর্ষণ করবে পর্যটকদের। লেকের মাঝখানে গড়ে তোলা দ্বীপ থেকে তীরে আসা-যাওয়া করার জন্য রয়েচ্ছে আকর্ষণীয় ব্রীজ।
পাখিশালার সদর দরজায় বিশালাকারের লেক এবং লেকের মাঝে দ্বীপের আকর্ষণ ছাড়াও এর অভ্যন্তরে একাধিক স্থানে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হয় কৃত্রিম হ্রদ।
এসব হ্রদ পাখিশালার বাসিন্দা হরেক প্রজাতির পাখি ও পশুর পানির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দারুণ শোভা ছড়াচ্ছে। লেক খনন ও ব্রীজ নির্মাণের পাশাপাশি হরেক জাতের পশুখাদ্যের বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষের চারা রোপণ করা হল এই পার্কে ।
পাখিশালা এলাকার বাগানের শূন্যস্থানে এসব বৃক্ষের চারা রোপণ করে পাখিকুলের প্রাকৃতিক খাদ্যের সংস্থান করা হচ্ছে।

Chittagong-5শহীদ জিয়া জাদুঘর : এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বিপরীত দিকে একটি শিশুপার্ক। শিশুপার্ক ছাড়িয়ে লালখান বাজার যাওয়ার পথ ধরে সামান্য হাঁটলেই রাস্তার ডানদিকে শহীদ জিয়া জাদুঘর। টিকিট কেটে জাদুঘরে ঢুকতে হয়। সার্কিট হাউসের যে ঘরটিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হন। সেই ঘরের স্মৃতিচিহ্নসহ জিয়াউর রহমান ব্যবহƒত নানা জিনিসপত্র এবং তার বেশকিছু দুর্লভ ছবি রয়েছে এখানে। রয়েছে চট্টগ্রাম কালুরঘাটে খালকাটা কর্মসূচিতে নেতৃত্বদানরত অবস্থায় শহীদ জিয়ার একটি ভাস্কর্য।
বাটালি পাহাড় : টাইগার পাস এবং লালখান বাজারের মাঝামাঝি অবস্থান বাটালি পাহাড়ের। বোদ্ধা ব্যক্তিরা বলে থাকেন, চট্টগ্রামের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে অবশ্যই টাইগার পাস আসতে হবে এবং বাটালি পাহাড়ে উঠতে হবে। বাটালি পাহাড়ে রয়েছে হরেক রকম গাছপালা। এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য পাহাড় কেটে সুবিন্যস্তভাবে তৈরি করা সিঁড়ি। বাটালি পাহাড় থেকে পুরো চট্টগ্রাম দেখা যায়। মনে হবে, পাহাড়ের কোলে গা ঘেঁষে ঘুমাচ্ছে চট্টগ্রাম।
Chittagong-2চেরাগী পাহাড় : চেরাগী পাহাড় পত্রিকাপাড়া নামেও পরিচিত। এখানে প্রায় সব জাতীয় পত্রিকা, টিভি চ্যানেল, রেডিও চ্যানেল, ইন্টারনেটভিত্তিক সংবাদমাধ্যমের অফিস রয়েছে। রয়েছে স্থানীয় পত্রিকার অফিসও। চট্টগ্রামের সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং প্রাচীন পত্রিকা প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে প্রকাশিত দৈনিক আজাদীর অফিস এখানেই।
তারপরই আন্দরকিল্লা। আন্দরকিল্লায় রয়েছে শাহী মসজিদ, জেএম সেন হলে গেলে দেখতে পাওয়া যাবে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পুরোধাপুরুষ মাস্টারদা সূর্যসেনের আবক্ষমূর্তি।
এর একটু দুরেই চকবাজার। যেখানে দুটি দর্শনীয় স্থান হচ্ছে সুপ্রাচীন অলি খাঁ মসজিদ ও নানক গুরুদুয়ার।
লালদীঘি : লালদীঘির ময়দান নানা কারণে মানুষের কাছে বহুল পরিচিত। চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সমাবেশ স্থল এটি। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যে পরিমাণ মানুষ জমায়েত হয় তা বিস্ময়কর। এছাড়া সংগ্রাম-আন্দোলনের অন্যতম, প্রধানতম বললেও ভুল হবে না, সূতিকাগার এটি। ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলা এখানেই হয়।
ওয়ার সেমেট্রিওয়ার সিমেট্টি : নগরীর প্রবর্তক মোড় পেরিয়ে বাদশা মিয়া রোডে এর অবস্থান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকদের একাংশ এখানে সমাহিত করা হয়েছে। ফুলের বাগান বেষ্টিত মনোরম এ স্থান স্মরণ করিয়ে দেয় সেইসব সৈন্যদের শৌর্যবীর্য ও বীরত্বগাথা। ছোট ছোট সমাধিফলক সারিবদ্ধভাবে সাজানো।
কর্ণফুলী নদীঃ এটি ভারতের মিজোরামের লুসাই পাহাড়ে শুরু হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার কাছে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। এই নদীর মোহনাতে বাংলাদেশের প্রধান সমূদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দর অবস্থিত। এই নদীর দৈর্ঘ্য ৩২০ কিলোমিটার।
** কর্ণফুলী নদীর নামের উৎস সম্পর্কে বিভিন্ন কাহিনী প্রচলিত আছে। কথিত আছে যে, আরাকানের এক রাজকন্যা চট্টগ্রামের এক আদিবাসী রাজপুত্রের প্রেমে পড়েন। এক জ্যোৎস্নাস্নাত রাতে তাঁরা দুই জন এই নদীতে নৌভ্রমণ উপভোগ করছিলেন। নদীর পানিতে চাঁদের প্রতিফলন দেখার সময় রাজকন্যার কানে গোঁজা একটি ফুল পানিতে পড়ে যায়। ফুলটি হারিয়ে কাতর রাজকন্যা সেটা উদ্ধারের জন্য পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু প্রবল স্রোতে রাজকন্যা ভেসে যান, তাঁর আর খোঁজ পাওয়া যায় নি। রাজপুত্র রাজকন্যাকে বাঁচাতে পানিতে লাফ দেন, কিন্তু সফল হন নি। রাজকন্যার শোকে রাজপুত্র পানিতে ডুবে আত্মাহুতি দেন। এই করুণ কাহিনী থেকেই নদীটির নাম হয় ‘কর্ণফুলী। মার্মা আদিবাসীদের কাছে নদীটির নাম কান্সা খিওং।
বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার : মাতৃভক্তি এবং ধর্মীয় কারণে স্মরণীয় হয়ে আছেন বায়েজিদ বোস্তামী। মাজার পুকুরে রয়েছে দানবাকৃতির অনেকগুলো কাছিম। জনশ্রতি আছে, কাছিমগুলোর বয়স কয়েক শত বছর। এছাড়াও স্থাপত্যশৈলীর অনুপম নিদর্শন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সিরাজউদ্দৌলা রোডের চন্দনপুরা হামিদিয়া তাজ মসজিদ। প্রায় তিনশ’ বছর আগে নির্মিত এ মসজিদটির সৌন্দর্য এখনও মানুষকে বিমোহিত করে।
পারকি সমুদ্রসৈকত : চট্টগ্রাম শহর থেকে বেশ দূরেই এটির অবস্থান। আনোয়ারা থানায় গড়ে ওঠা এ নয়নজুড়ানো সমুদ্রসৈকত তেমন একটা পরিচিতি পায়নি। সৈকতের পাড় ঘেঁষে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে একটি ঝাউবন। জায়গাটা সবসময় চিকচিক বালিতে ভরে থাকে বলে রসিকজনেরা বলে থাকেন বালুবনে ঝাউবন! সমুদ্রের কথা বাদ দিলেও শুধু ঝাউবনের আকর্ষণে অনেকেই ছুটে যান পারকিতে। সৈকতে সামুদ্রিক কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ নির্মল আনন্দদান করে। রয়েছে নোঙ্গর করা জাহাজ সারি।
সন্দ্বীপ : অনেকেই ভুল করে সন্দ্বীপকে নোয়াখালী জেলার অংশ ভাবেন। আসলে এটা চট্টগ্রামেরই একটি থানা। যদিও ভাষা কৃষ্টি সংস্কৃতি অনেকটা নোয়াখালীর মতোই। জলবেষ্টিত এ সুন্দর দ্বীপের আয়তন খুব একটা বেশি নয়, তুলনামূলক জনসংখ্যাও কম। দুইভাবেই সন্দ্বীপ যাওয়া যায়।
বিপ্লব উদ্যান : ষোলশহর দুই নম্বর গেটের আকারে ছোট কিন্তু ছিমছাম পার্ক বিপ্লব উদ্যানের অবস্থান। এটি দর্শনার্থীদের জন্য উš§ুক্ত করে দেয়া হয় বিকাল চারটার পর। নগরবাসীর এবং পর্যটকদের একটুখানি নিঃশ্বাস ফেলার এবং নেয়ার বিশ্বস্ত জায়গা এটি। ফুলবাগান, কয়েক ধরনের গাছের পাশাপাশি প্রধানতম আকর্ষণ স্বাধীনতা ভাস্কর্য।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস : সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। শিক্ষার কথা বাদ দিলে সৌন্দর্যের দিক দিয়ে এটি অদ্বিতীয়। এ সৌন্দর্যের তুলনা নেই। নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত পাহাড়ের উপরে স্থাপিত এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় চারদিকেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়। পাহাড় কেটে কেটে যে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে তা যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। দুইপাশে সগর্বে দাঁড়িয়ে থাকা যমজ পাহাড়, মাঝখানে পাহাড়ের বুক চিরে চলে গেছে সরু রাস্তা। মনোমুগ্ধকর দৃশ্যই বটে।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এবং আকর্ষণ শাটল ট্রেন। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য চালু করা হয়েছে শাটল ট্রেন ব্যবস্থাটি। একমাত্র চট্টগাম ছাড়া দেশের আর কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেনের ব্যবস্থা নেই। এ শাটল ট্রেনের আড্ডা কিংবদন্তির পর্যায়ে চলে গেছে। সুযোগ হলে শাটল ট্রেনে চড়ে বিরল অভিজ্ঞতা অর্জন করা যেতে পারে। অবশ্য অছাত্রদের জন্য শাটল ট্রেনে চড়ার বিধিসম্মত কোন ব্যবস্থা নেই!
কিভাবে যাবেনঃ
Chittagong-1>> বিমানে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ২০ মিনিটের মত লাগে, জি এম জি, ইউনাইটেড এয়ার সহ বাংলাদেশ বিমানের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ও ট্রানজিট ফ্লাইট আছে।
UNITED AIRWAYS FARE CHART
REGENT AIRWAYS
>> ট্রেনে যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে অনেক গুলো ট্রেন ছেড়ে যায় , সুবর্ণ, মহানগর প্রভাতি , মহানগর গোধূলি, তুরনা নিশিতা , চট্টগ্রাম মেইল, কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, চট্টলা এক্সপ্রেস ।
>> গ্রীন লাইন, সাউদিয়া এস আলম, হানিফ এন্টারপ্রাইজসহ অনেক এসি / নন এসি বাস যাতায়াত করে থাকে। আরামবাগ, সায়েদাবাদ হতে চট্টগ্রামগামী বাস পাওয়া যায়। এসি – ৯০০/- টাকা হতে শুরু, নন এসি – ৫০০/- টাকা হতে শুরু।
সৌদিয়া পরিবহন ০১৯১৯৬৫৪৯২৯ , এস. আলম পরিবহন ০১৯১৭৭২০৩৯৫ , ইউনিক সার্ভিস ০১১৯১৬২১১২৭
চট্টগ্রাম শহরে যাতায়াতঃ
চট্টগ্রাম শহরে রিক্সা ভাড়া একটু বেশি, বেশির ভাগ রাস্তাই ঢালু রিক্সা চালানো বেশ কষ্টকর। সিএনজি ভাড়া ঢাকার চেয়ে একটু কম। তবে বাস সার্ভিস খুব ভালো। যে কোন জায়গায় বাসে যেতে পারবেন। পর্যাপ্ত পরিমানে আছে। ভাড়াও কম। বিশেষ করে দর্শনীয় স্থান সব গুলোই বাসে যেতে পারেন সিংহ ভাগ রাস্তা। পরে কিছু পথ রিক্সা লাগতে পারে। শহরতলী বাস গুলো মূলত বহদ্দার হাট বা নতুন ব্রিজ থেকে শুরু হয়।
১ নং বাস:
নিউ মার্কেট – লালদীঘি – আন্দরকিল্লা – চন্দনপুরা – চকবাজার – বাদুড়তলা – বহদ্দারহাট ।
২ নং বাস:
নিউ মার্কেট – লালদীঘি – আন্দরকিল্লা – গণি বেকারী – চকবাজার – প্রবর্তক – ২ নং গেট – মুরাদপুর – বহদ্দারহাট – কালুরঘাট ।
৩ নং বাস:
নিউ মার্কেট – কাজীর দেউরী – গোলপাহাড় – প্রবর্তক – ২ নং গেট – বিবিরহাট – অক্সিজেন – চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ।
৪ নং বাস:
নিউ মার্কেট – টাইগার পাস – লালখান বাজার – দামপাড়া/জিইসি – ঝাউতলা – একে খান – ভাটিয়ারী ।
৫ নং বাস :
লালদীঘি – নিউ মার্কেট – টাইগার পাস – দেওয়ান হাট – আগ্রাবাদ – বারেক বিল্ডিং – সল্টগোলা – ইপিজেড – বন্দরটিলা – সিমেন্ট ক্রসিং – মেরিন একাডেমী – বিমানবন্দর ।
৬ নং বাস :
লালদীঘি – নিউ মার্কেট – টাইগার পাস – দেওয়ান হাট – আগ্রাবাদ – বারেক বিল্ডিং – সল্টগোলা – ইপিজেড – বন্দরটিলা – সিমেন্ট ক্রসিং – কাঠগড় – সী বিচ ।
৭ নং বাস:
লালদীঘি – নিউ মার্কেট – দেওয়ানহাট – বাদামতলী মোড় (আগ্রাবাদ) – বড়পুল – অলংকার – ভাটিয়ারী ।
৮ নং বাস:
লালদীঘি – নিউ মার্কেট – টাইগার পাস – লালখান বাজার – জিইসি – ২ নং গেট – বায়েজিদ বোস্তামী – অক্সিজেন ।
১০ নং বাস:
নতুন ব্রীজ – বহদ্দারহাট – মুরাদপুর – ২ নং গেট – জিইসি – লালখান বাজার – টাইগার পাস – দেওয়ানহাট – আগ্রাবাদ – বারেক বিল্ডিং – সল্টগোলা – ইপিজেড – বন্দরটিলা – সিমেন্ট ক্রসিং – কাঠগড় ।
১০/এ নং বাস:
কালুরঘাট – বহদ্দারহাট – মুরাদপুর – ২ নং গেট – জিইসি – লালখান বাজার – টাইগার পাস – দেওয়ানহাট – আগ্রাবাদ – বারেক বিল্ডিং – সল্টগোলা – ইপিজেড – বন্দরটিলা – সিমেন্ট ক্রসিং – কাঠগড় ।
(উপরোক্ত রুট লিস্ট ৯৫% নির্ভুল । এর বাইরেও ২-১ টি রুট থাকতে পারে, যেমন ১১ নং বাস । তবে মূল শহরে এগুলোই প্রধান)
কোথায় থাকবেনঃ
হোটেল আগ্রাবাদ(৫ তারকা)
পেনিনসুলা (৩ তারকা)
হোটেল এশিয়ান
এছাড়াও ষ্টেশন রোডে এবং বহদ্দার হাটে মধ্যম মানের অনেক গুলো আবাসিক হোটেল আছে।
খাবারদাবারঃ
মেজবানের গোশত ও আখনি বেশ নামকরা। আখনি হলো তেহেরির মত। জিএসসি মোড়ে, লাল খান বাজারে ভালো ভালো অনেক চাইনিজ, বুফে, ফাস্টফুড ও পেস্ট্রি দোকান আছে। নাসিরা বাদে সানমার মার্কেটের উপরে ফুড কোর্ট রয়েছে। হাইওয়ে এর কেক খেতে ভুলবেন। ঢাকাতেও এত টেস্টি কেক পাবেন না। নিউমার্কেটের ২য় তলায় ডায়মন্ড অনেক পুরানো ও নামকরা রেস্টুরেন্ট। বুফে খেতে যেতে পারেন অ্যামব্রোসিয়া । আমি বলবো এক কথায় অসাধারণ। তবে মেরিডিয়ানেরতাও খারাপ না।
চট্টগ্রামের ট্যুরিস্ট স্পট গুলো সহজে খুঁজে নিনঃ
বহদ্দার হাটকে কেন্দ্র ধরে নিলে ,
> বহদ্দার হাট বাস টার্মিনালের উল্টা দিকে স্বাধীনতা কমপ্লেক্স (২৪ তলার উঁচুতে রেস্টুরেন্ট ও মিনি বাংলাদেশ) ,
> বহদ্দার হাট থেকে সোজা মুরাদপুর মুরাদপুরের ডানের রাস্তা হাটহাজারি তথা রাঙ্গামাটির বাস টার্মিনাল তথা অক্সিজেন মোড় , বামের রাস্তা দিয়ে ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্ক এবং আরও বেশ কিছু দুর গেলে চেরাগি পাহাড়, ডিসি হিল।
> মুরাদপুর থেকে সোজা ২ নম্বর গেট। ২ নম্বর গেট থেকে ডানে বায়োজিদ বোস্তামি (র) মাজার। মাজার থেকে সোজা অক্সিজেনের মোড়। অক্সিজেন হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
> ২ নম্বর গেট থেকে সোজা জিইসি মোড়। জিএসসি মোড় থেকে বামে গোল পাহাড় এখানে বাদশা মিয়া রোডের মাথায় ওয়ার সিমেট্রি। ডানের রাস্তা চলে গেলো ফয়েস লেক ও চিড়িয়াখানা হয়ে ভাটিয়ারী সীতাকুণ্ড।
> জিইসি মোড় থেকে সোজা যেতে থাকলে হাতের ডানে পরবে গরীবুল্লাহ শাহ (র) মাজার।
> জিইসি মোড় ছাড়িয়ে ওয়াসার মোড়ে পরবে জামাতুল ফালাহ মসজিদ। মসজিদ থেকে সোজা ডানে আলমাস ও ঝুমুর সিনেমা হল।
> ওয়াসা মোড় থেকে সোজা ইস্পাহানি সার্কেল । এটাই লাল খান বাজার। এই মোড় থেকে বামে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর, শিশু পার্ক ও এম এ আজিজ স্টেডিয়াম।
> লাল খান বাজার থেকে সোজা টাইগার পাস। টাইগার পাসের বামের রাস্তা রেলওয়ে শত বছর পুরানো সিআরবি ভবন। ভবন থেকে সোজা কদমতলি ছাড়িয়ে রেল ষ্টেশন। ষ্টেশন থেকে সোজা নিউমার্কেট। নিউমার্কেট থেকে সোজা কোতয়ালি মোড় থেকে বামের রাস্তায় লাল দিঘি। লাল দিঘির কাছেই শাহ আমানত (র) মাজার।
> টাইগার পাস থেকে সোজা আগ্রাবাদ বাদামতলি মোড় গিয়ে বামের রাস্তায় এগুলে জাতিসত্ত জাদুঘর।
> আগ্রাবাদ থেকে সোজা পোর্ট , পতেঙ্গা সি বীচ।

খাগড়াছড়ি ভ্রমন- কি ভাবে যাবেন, কি দেখবেন? কোথাই থাকবেন? কত খরচ?

খাগড়াছড়ি খাগড়াছড়ি: সৃষ্টিকর্তা অকৃপণভাবে সাজিয়েছে খাগড়াছড়িকে। স্বতন্ত্র করেছে বিভিন্ন অনন্য বৈশিষ্ট্যে। এখানে রয়েছে আকাশ-পাহাড়ের মিতালী, চেঙ্গী ও মাইনী উপত্যকার বিস্তীর্ণ সমতল ভূ-ভাগ ও উপজাতীয় সংস্কৃতির বৈচিত্র্যতা। যেদিকেই চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আর রহস্যময়তায় ঘেরা খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা প্রকৃতিপ্রেমী, অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় বা ভ্রমণবিলাসীদের জন্য আদর্শ স্থান।প্রকৃতির অনন্য সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে এ জেলার আনাচে-কানাচে। এ জেলার বৈচিত্র্যময় জীবনধারা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবাইকে বিমোহিত করে।
দর্শনীয় স্থানঃ
1) তৈদুছড়া
2) আলুটিলা
3) আলুটিলার সুরঙ্গ বা রহস্যময় গুহা
4) দেবতার পুকুর
5) মহালছড়ি হ্রদ
6) শতায়ুবর্ষী বটগাছ
7) পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র
8) রিছাং ঝর্না
9) ভগবান টিলা
10) দুই টিলা ও তিন টিলা
11) মানিকছড়ি মং রাজবাড়ি
12) বন ভান্তের প্রথম সাধনাস্থল
13) রামগড় লেক ও চা বাগান
যেভাবে যাবেনঃ
খাগড়াছড়ি ভ্রমণরাজধানী ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন আরামদায়ক বাস ছাড়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০-১৫টি। সাইদাবাদ, কমলাপুর, গাবতলী, ফকিরাপুল, কলাবাগান ও টিটি পাড়া থেকে টিকেট সংগ্রহ করে এস আলম, স্টার লাইন, শ্যামলী, সৌদিয়া, শানিত্ম স্পেশাল ও খাগড়াছড়ি এক্সপ্রেসযোগে খাগড়াছড়ি যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে ট্রেনে ফেনী এসেও হিলকিং অথবা হিল বার্ড বাসে চড়ে খাগড়াছড়ি যাওয়া যায়। চট্টগ্রামের অক্সিজেন থেকেও শানিত্ম স্পেশাল ও লোকাল বাসে উঠে যাওয়া যায় খাগড়াছড়িতে।
কোথায় থাকবেনঃ
পর্যটকদের জন্য খাগড়াছড়িতে রয়েছে অনেক আবাসিক হোটেল। পর্যটন মোটেলে থাকতে পারেন, এছাড়া আছে জিরান হোটেল, হোটেল শৌল্য সুবর্ণ, থ্রী স্টার হোটেল, হোটেল লবিয়ত। কিছু হোটেল এর ফোন নাম্বার দেওয়া হলোঃ
পর্যটন মোটেলঃ ৬২০৮৪ ও ৬২০৮৫
হোটেল শৌল্য সুবর্ণঃ ৬১৪৩৬
জিরান হোটেলঃ ৬১০৭১
হোটেল লিবয়তঃ ৬১২২০
চৌধুরী বাডিং: ৬১১৭৬
থ্রি ষ্টার: ৬২০৫৭
ফোর ষ্টারঃ ৬২২৪০
উপহারঃ ৬১৯৮০
হোটেল নিলয়ঃ ০১৫৫৬-৭৭২২০৬

তৈদুছড়াঃ
খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলায় সবুজ পাহাড় আর বুনো জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত নয়নাভিরাম ঝর্না দুটির নাম তৈদুছড়া ঝর্না। ত্রিপুরা ভাষায় “তৈদু” মানে হল “পানির দরজা” আর ছড়া মানে ঝর্না। অসাধারণ সৌন্দর্য আর প্রাকৃতিক বৈচিত্রতা এই ঝর্নাকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। খাগড়াছড়িতে যে কয়টি দর্শনীয় স্থান রয়েছে তৈদুছড়া তাদের মধ্যে অন্যতম। এখানে পাহাড় আর সবুজ বুনো জঙ্গেলর মাঝে আঁকা বাঁকা পাহাড়ের ভাঁজ দিয়ে বয়ে চলে ঝর্নার জল। ৩০০ ফুট উচু পাহাড় হতে গড়িয়ে পড়া পানি এসে পরছে পাথুরে ভূমিতে। অন্য সকল ঝর্নার মত এর পানি সরাসরি উপর হতে নিচে পরছে না। পাহাড়ের গায়ে সিড়ির মত তৈরি হওয়া পাথুরে ধাপ গুলো অতিক্রম করে নিচে পরছে।
ঢাকা কিংবা খাগড়াছড়ি হতে গাড়ী নিয়ে সরাসরি যাওয়া যায় দীঘিনালায়। তৈদুছড়া ভ্রমনের জন্য খাগড়াছড়িতে রাত্রি যাপন না করে দীঘনালায় থাকাই উত্তম। এখানে থাকার জন্য একটি ভাল মানের রেষ্টহাউজ আছে। গাড়ী নিয়ে দীঘিনালা হতে সামনে এগিয়ে চাপ্পাপাড়া পর্যন্ত যাওয়া যায়। এর পর আর গাড়ী চলার কোন পথ না থাকায় বাকী পথটুকু হেঁটেই যেতে হবে। দীঘিনালা হতে সব মিলিয়ে তৈদুছড়ি পর্যন্ত পৌছতে প্রায় ৪ ঘন্টা সময় লাগে। নির্ভর করে হাঁটার গতির উপর। সুতরাং সকালে রওয়ানা দিলে অনায়েসেই সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসা সম্ভব। এই আসা যাওয়ার পথটি মোটেও বিরক্তিকর নয়। হাঁটতে হাঁটতে যতটা না ক্লান্তি আপনাকে গ্রাস করবে তার চাইতেও বেশী গ্রাস করবে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নেশা। চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায় যে আপনি আসক্ত হবেনই।
চাপ্পাপাড়া কিংবা পোমাংপাড়া হতে দুর্গম পথ, অনেক গুলো ঝিরি, উচু নিচু পাহাড়, কোথাও হাটু সমান আবার কোথাও বুক সমান পানি আর বুনো জঙ্গল পাড়ি দিয়ে অবশেষে প্রায় ৩ ঘন্টা হাঁটার পর আপনি পৌছবেন ১ম ঝর্নাটিতে। এটি প্রায় ৬০ ফুট উচু। ঝর্নামুখ হতে পানি পাহাড়ের গাঁয়ে পরে তা পাহাড় বেয়ে নিচে এসে ছোট একটি হ্রদের মিলিত হয়েছে।
প্রথম ঝর্ণার ডানপাশ দিয়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উঠলে খুব কাছাকাছি পেয়ে যাবেন ২য় ঝর্নাটি। এখানে প্রায় ৮০-৮৫ ডিগ্রী এঙ্গেলের ঢাল বেয়ে প্রায় ১০০ ফুট উপরে উঠতে হবে। উপরে উঠলে প্রথমেই চোখে পড়বে ঝর্না মুখ যেখান হতে ১ম ঝর্নার পানি পড়ছে। ২য় ঝর্না হতে ঝিরি পথে পানি আসছে এখানে। ঝিরি পথ ধরে প্রায় ঘন্টা খানেক হাটলে পরে পৌছানো যায় ২য় ঝর্নাটিতে। এই চলার পথটি যেমন কষ্টকর তেমনি রোমাঞ্চকর আর আহামরি সুন্দর। উপর থেকে প্রচন্ড বেগে পানি নেমে আসছে। এই বেগ ঠেলে পানি বরাবরই হাঁটতে হয়। ডানে বায়ে যেখানে পানির স্রোত কম সেখানে শ্যাওলা জমেছে। একটুতেই পা পিছলে যায়। মাঝে মাঝে এখানে পানির স্রোত খুব বেশী যে ধাক্কা দিয়ে নিচে নিয়ে যেতে চায়। তাই এখানে পা টিপে টিপে অনেক সাবধানে হাঁটতে হবে। একবার পিছলে গেলে কয়েকশ হাত দূরে নিক্ষিপ্ত হতে হবে। এখান হতে আরো উপরে উঠতে হবে। চলার পথে পারি দিতে হবে বড় বড় পাথর আর কোমর সমান পানি। অতপর পেয়ে যাবেন দ্বিতীয় তৈদু ঝর্ণা।
অপূর্ব নয়নাভিরাম সে ঝর্না। এটি এতই দৃষ্টিনন্দন আর ব্যতিক্রম যে কারো আর তড় সইবে না। ঝর্নার নিচে ঝাপিয়ে পরতে মন চাইবে। ঝর্ণাটি প্রায় ৮০ ফুট উচু। ঝর্নার পানি এসে সরাসরি যেখানে পড়ছে সেখানে সিড়ির মত অনেকগুলো পাথুরে ধাপ রয়েছে। ধাপগুলো বেয়ে পানি নিচে গড়িয়ে পড়ছে। ধাপগুলোতে দাড়িয়ে অনায়েসেই গোসলের কাজটি সেরে নেয়া যায়। দীর্ঘ ক্লান্তিকর হাটার কষ্ট মুহুর্তেই ধুয়ে যাবে ঝর্নার জলে।
এখানে সারা বছরই পানি থাকে। শীতে জল প্রবাহ কমে যায়। আর বর্ষার হয়ে উঠে পূর্ণ যৌবনা। তবে শীতের আগে ও বর্ষার শেষে এখানে ঘুরতে যাওয়া উত্তম সিদ্ধান্ত।
যেভাবে যেতে হবে: খাগড়াছড়ি হতে বাসে করে আসতে হবে দীঘিনালায়। দীঘিনালায় রাত্রি যাপন, সাথে তৈদুছড়া আসার জন্য প্রশাসনের অনুমতি গ্রহন ও গাইড নির্বাচন করে পরেরদিন ভোরে দীঘিনালা হতে গাড়ীতে/মোটরসাইকেলে করে চাপ্পাপাড়া। চাপ্পাপাড়া হতে পায়ে হেঁটে তৈদুছড়া।
আলুটিলার সুরঙ্গ বা রহস্যময় গুহাঃ
খাগড়াছড়ি শহর হতে ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে মাটিরাঙ্গা উপজেলার আলুটিলা পযর্টন কেন্দ্রে রয়েছে একটি রহস্যময় গুহা। স্থানীয়রা একে বলে মাতাই হাকড় বা দেবতার গুহা। তবে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে অবস্থিত বলে একে আলুটিলা গুহাই বলা হয় । এটি খাগড়াছড়ির একটি নামকরা পর্যটন কেন্দ্র। খাগড়াছড়ি বেড়াতে এলে সবাই অন্তত এক বার হলেও এখানে ঘুরে যায়। এটি একটি চমৎকার পিকনিক স্পট। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়, হৃদয় ছুয়ে যায়। আলুটিলা খাগড়াছড়ি জেলার সব চাইতে উচু পর্বত। নামে এটি টিলা হলেও মূলত এটি একটি পর্বতশ্রেনী। এখান হতে খাগড়াছড়ি শহরের বেশ কিছুটা অংশ দেখা যায়। শুধু তাই নয় পাহাড়ের সবুজ আপনার চোখ কেড়ে নেবে। আকাশ পাহাড় আর মেঘের মিতালী এখানে মায়াবী আবহ তৈরি করে।
আলুটিলা রহস্যময় সুগঙ্গে যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে পর্যটন কেন্দ্রের টিকেট কেঁটে ভীতরে প্রবেশ করতে হবে। ফটক দিয়ে পর্যটন কেন্দ্র প্রবেশের সময় আপনাকে মশাল সংগ্রহ করতে হবে। কারন রহস্যময় গুহাটিতে একেবারেই সূর্যের আলো প্রবেশ করে না। পর্যটন কেন্দ্রের ফটক দিয়ে প্রবেশ করে ডান পাশের রাস্তা দিয়ে মিনিট খানে হাঁটলেই চোখে পড়বে একটি সরু পাহাড়ীপথ। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নীচে নেমে গেছে এই পথটি। এই পথটি বেয়ে নিচে নামলেই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে প্রথম চমকটি। হঠাৎ চোখে পড়বে একটি ছোট ঝর্না। ঝর্নার পানি নেমে যাচ্ছে নিচের দিকে ঝিরি বরাবর। তবে এখানে পাহাড়ী লোকজন ঝর্নার পানি আটকে রাখার জন্য একটি বাঁধ দিয়েছে। তারা এই পানি খাবার ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করে।
আর ফটক হতে বাম দিকের রাস্তা বরাবর হাঁটলে পরে পাবেন রহস্যময় সেই গুহা। গুহাতে যাবার আগে আপনি পাবেন একটি বিশ্রামাগার ও ওয়াচ টাওয়ার। এর সামনে দিয়ে রাস্তা চলে গেছে আলুটিলা গুহা মুখে। আগে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নামতে হতো গুহামুখে। কিন্তু এখন পর্যটন কর্পোরেশন একটি পাকা রাস্তা করে দিয়েছে। ফলে খুব সহজেই হেঁটে যাওয়া যায় গুহামুখে।
পাকা রাস্তা শেষ হলে আপনাকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে হবে। প্রায় ৩৫০টি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলে পরে পাওয়া যাবে কাঙ্খিত সেই আলুটিলা গুহা। গুহাটি খুবই অন্ধকার ও শীতল। কোন প্রকার সূর্যের আলো প্রবেশ করে না তাই মশাল নিয়ে ভীতরে প্রবেশ করতে হয়। একেবারেই পাথুরে গুহা এটি। গাঁ ছম ছম করা পরিবেশ। খুব সাবধানে পা ফেলে সামনে এগুতে হয়। কারন সুরঙ্গের ভীতরে কোন আলো নেই। সুরঙ্গের তলদেশ পিচ্ছিল এবং পাথুরে। এর তলদেশে একটি ঝর্না প্রবাহমান। তাই খুব সাবধানে মশাল বা আলো নিয়ে গুহা পাড়ি দিতে হবে। পা ফসকে গেলেই আহত হতে হবে।
তবে অন্য কোন ভয় নেই। গুহাটি একেবারেই নিরাপদ। এর দৈর্ঘ প্রায় ৩৫০ ফুট। গুহার ভীতরে জায়গায় জায়গায় পানি জমে আছে, রয়েছে বড় বড় পাথর। গুহাটির এপাশ দিয়ে ঢুকে ওপাশ দিয়ে বের হতে সময় লাগবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। গুহাটি উচ্চতা মাঝে মাঝে এতটাই কম যে আপনাকে নতজানু হয়ে হাটতে হবে। সব কিছূ মিলিয়ে মনে হবে যেন সিনেমার সেই গুপ্তধন খোঁজার পালা চলছে। বিশ্বে যতগুলো প্রাকৃতিক রহস্যময় গুহা আছে আলুটিলা সুরঙ্গ তার মধ্যে অন্যতম।

দেবতার পুকুরঃ
জেলা সদর থেকে মাত্র ০৫ কি:মি: দক্ষিণে খাগড়াছড়ি – মহালছড়ি সড়কের কোল ঘেষে অবস্থিত মাইসছড়ি এলাকার আলুটিলা পর্বত শ্রেণী হতে সৃষ্ট ছোট্ট নদী নুনছড়ি। মূল রাস্তায় বাস থেকে নেমে কিলো দুয়েক পায়ে হাঁটা পথ। নিজস্ব পরিবহন থাকলে তা নিয়ে আপনি সোজা চলে যেতে পারেন একেবারে পাদদেশে নদীর কাছে। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হলে পাহাড়ের কোলে খানিকটা জিরিয়ে নিতে পারেন। যাওয়ার পথেই দেখা যাবে নুনছড়ি নদীর ক্ষীণ স্রোতের মাঝে প্রকান্ড পাথর। স্বচ্ছ জলস্রোতে স্থির পাথর আপনাকে মোহিত করবে। ছবি প্রেমিক পর্যটকরা এখানে ছবি তোলেন। সমুদ্র সমতল হতে ৭০০ ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের চূড়ায় এই দেবতার পুকুর অবস্থিত।
কথিত আছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের জল তৃঞ্চা নিবারণের জন্য স্বয়ং জল-দেবতা এ পুকুর খনন করেন। পুকুরের পানিকে স্থানীয় লোকজন দেবতার আশীর্বাদ বলে মনে করে। দেবতার অলৌকিকতায় পুকুরটি সৃষ্ট বলে এতো উঁচুতে অবস্থানের পরও পুকুরের জল কখনও শুকোয় না। প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নরনারী পূণ্য লাভের আশায় পুকুর পরিদর্শনে আসে। কিংবদন্তীর দেবতার পুকুরটি ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর কাছে পূজনীয়।
মহালছড়ি হ্রদঃ
কাপ্তাই বাঁধের ফলে কাপ্তাই হ্রদের পানি জমে নানিয়ারচর হয়ে মহালছড়ি পর্যন্ত এসেছে। বর্ষাকালে বিশাল জলরাশি জমাট হয়ে পরিণত হয় এক ফ্রিঞ্জল্যান্ডে। মহালছড়ি ডাকবাংলো হতে এ নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে যে কোন পর্যটক মুগ্ধ না হয়ে পারেন না। এ ছাড়া মহালছড়ি হতে এ হ্রদ দিয়ে রাঙামাটি যাওয়ার পথে দু’ধারের মনোরম ও নয়নাভিরাম দৃশ্য ভ্রমন পিপাসুদের ভাল লাগবেই।
শতায়ুবর্ষী বটগাছঃ
মাটিরাংগা উপজেলার খেদাছড়ার কাছাকাছি এলাকায় এ প্রাচীন বটবৃক্ষ শুধু ইতিহাসের সাক্ষী নয় এ যেন দর্শনীয় আশ্চর্যের কোন উপাদান। এ গাছের বয়স নিরূপনের চেষ্টা একেবারেই বৃথা। পাঁচ একরের অধিক জমির উপরে এ গাছটি হাজারো পর্যটকের কাছে দারুণ আকর্ষণীয়। মূল বটগাছটি থেকে নেমে আসা প্রতিটি ঝুড়িমূল কালের পরিক্রমায় এক একটি নতুন বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয়, ঝুড়িমূল থেকে সৃষ্ট প্রতিটি বটগাছ তার মূল গাছের সাথে সন্তানের মতো জড়িয়ে আছে। খাগড়াছড়ি কেউ যদি একবার আসেন তাহলে ভুলেও কেউ শতায়ু বর্ষী বটগাছ না দেখে ফিরে যান না।
পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রঃ
খাগড়াছড়ি শহর থেকে মাত্র ৩ কি: মি: পূর্বেই কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। পাহাড়ের বুক চিড়ে রাস্তার দু’পাশে ফলের বাগান, স্বচ্ছ-স্থির জলরাশি, টিয়া সহ নানান প্রজাতির পাখি দেখে আপনি নিজেকে নতুনভাবে আবিস্কার করবেন আরেকবার। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপার লীলাভূমি এ কেন্দ্রটি। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী আসে শুধু সবুজের স্নিগ্ধতা মন্থনের আশায়। কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের অনিন্দ্য সুন্দর খামার যে কোন পর্যটককে মোহিত করার ক্ষমতা রাখে।
রিছাং ঝর্নাঃ
খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলায় অবস্থিত জেলার সবচাইতে বড় নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক ঝর্নাটির নাম হল রিছাং ঝর্না। শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই নয় এর ভিন্ন প্রকৃতি একে দিয়েছে আলাদা পরিচিত। আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র হতে ৪ কি.মি. পশ্চিমে মূল রাস্তা থেকে উত্তরে গেলেই ঝর্ণার কলধ্বণি শুনতে পাবেন। জেলা শহর থেকে ঝর্ণা স্থলের দুরত্ব সাকুল্যে ১১ কি: মি: প্রায়। হাজার ফুট নীচের উপত্যকায় দৃষ্টি পড়লে কোন অপূর্ব মুগ্ধতায় যে কেউ শিউরে উঠবেন। ঝর্ণার সমগ্র যাত্রাপথটাই দারুণ রোমাঞ্চকর। দূরের উঁচু-নীচু সবুজ পাহাড়, বুনো ঝোপ, নামহীন রঙীন বুনো ফুল এসব নয়নাভিরাম অফুরন্ত সৌন্দর্য আপনাকে এক কল্পনার রাজ্যে নিয়ে যাবে।
পাহাড়ী আঁকাবাঁকা পথ আর পথের দুধারে জমে থাকা সবুজ বনানী যাত্রা পথের সব ক্লান্তি দুর করে দিবে। পুরোটা পথ আপনি গাড়ী নিয়ে যেতে পারবেন না। ঝর্নার কিছু আগেই গাড়ী থেকে নেমে পায়ে হেঁটে যেতে হবে। পাহাড়ী পথটা মোটেও আরামদায়ক নয়। আপনাকে একটি বাশের লাঠি নিয়ে নিতে হবে তাতে পরিশ্রম কম হবে। লাল মাটির পথ মাড়াতে মাড়াতে বুঝতে পারবেন পাহাড়ী জীবন কতটা কষ্টকর। এভাবে হাটতে হাটতে একসময় কানে ভেসে আসবে গমগম করে পানি পড়ার শব্দ। বুঝতে পারবেন এসে পরেছেন রিছাং ঝর্না কাছে।
দৃষ্টিনন্দন সে ঝর্না। সত্যিই সৌন্দর্যের আধার রিছাং ঝর্না যেন প্রকৃতির এক অপার সৃষ্টি। পাহাড়ের প্রায় ১০০ ফুট উপর হতে ঝর্নার পানি নিচে পড়ছে। নিচে পড়ার পর তা আবার আরও ১০০ ফুট পাথরের ওপর গড়িয়ে নেমে আসে সমতলে। উপর হতে নেমে আসা স্ফটিক-স্বচ্ছ জলরাশি নির্ঝরের স্বপ্নের মতো অবিরাম প্রবাহমান। পাহাড়ের কোল ঘেষে পাথরের উপর দিয়ে পানি নিচে পড়ার ফলে একটি পিচ্ছিল পথের সৃষ্টি হয়েছে। আপনি একটু সাহসী হলেই সেই পানির স্রোতের সাথে নিচে নেমে আসতে পারেন। মেতে উঠতে পারেন জলকেলিতে।
যেভাবে যেতে হবেঃ
খাগড়াছড়ি হতে চান্দেরগাড়ী বা পাবলিক বাসে করে যেতে হবে আলুটিলা। আলুটিলা ভ্রমন শেষে যেতে হেবে সরাসরি রিছাং ঝর্না।
ভগবান টিলাঃ
জেলার মাটিরাংগা উপজেলা থেকে সোজা উত্তরে ভারত সীমান্তে অবস্থিত ভগবান টিলা। জেলা সদর থেকে এর কৌণিক দূরত্ব আনুমানিক ৮৫ কি:মি: উত্তর-পশ্চিমে। ঘন সবুজের ভিতর আঁকা -বাঁকা রাস্তা দিয়ে যতই এগিয়ে যাবেন পাহাড়ের অপরূপ নৈসর্গে অপলক নেত্রে আপনি বিস্ময়-বিহবল হবেন। এ যেন বিধাতার নিজ হাতে গড়া পর্বত রূপসী। সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ১৬০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এ টিলা সম্পর্কে কথিত আছে, এতো উঁচু টিলায় দাঁড়িয়ে ডাক দিলে স্বয়ং ভগবানও ডাক শুনতে পাবেন। প্রাচীন লোকজন তাই এ টিলাকে ভগবান টিলা নামকরণ করেছিলেন। চমৎকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার ভগবান টিলায় দাঁড়ালে সবুজের নৈসর্গ আর মাথার উপরের আকাশের নীলিমা দারুণ উপভোগ্য। সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বাংলাদেশ রাইফেলসের একটি আউট পোষ্টও আছে এখানে। সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে দাঁড়ালে মনে হয় আপন অস্তিত্ত্ব শূন্যের নি:সীমতায় হারিয়ে গেছে। ঘন সবুজ বাঁশের ঝোপ, নাম না জানা কোন পাখির ডাক, পাহাড়ের নীচ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝর্নার জীবন্ত শব্দ – সবকিছু মিলিয়ে হারিয়ে যাওয়ার এক অনন্য লীলাভূমি। গহীন অরণ্যের এই উঁচু টিলায় বিডিআর এর তৈরী রেষ্ট হাউজটি আপনাকে পৃথিবীর যে কোন সুন্দর জায়গাকেও ভুলিয়ে দেবে। কোন এক জ্যোৎস্না রাতে নি:সীম অরণ্যের মাঝে কোন সাহসী পর্যটক যদি প্রকৃতিকে উপভোগ করতে চান তবে ভগবান টিলা তুলনাহীন।
দুই টিলা ও তিন টিলাঃ
প্রকৃতির এক অপূর্ব বিস্ময় এই দুই টিলা ও তিন টিলা। জেলা সদর থেকে ৪২ কি:মি: দূরে খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা-মারিশ্যা রাস্তার কোল ঘেষে এই টিলায় দাঁড়ালে ভূগোলে বিধৃত গোলাকৃতি পৃথিবীর এক চমৎকার নমুনা উপভোগ করা যাবে। খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা এবং দীঘিনালা থেকে মারিশ্যার বাসে চড়ে আপনি অনায়াসেই যেতে পারেন এখানে। পাহাড় চূড়ায় দাঁড়িয়ে যেদিকে চোখ যায় মনে হয় যেন পৃথিবীর সমস্ত সবুজের সমারোহ এখানেই সমষ্টি বেঁধেছে। পাহাড়ের বুক চিড়ে সর্পিল রাস্তা নি:সর্গের এক নতুন মাত্রা বলে মনে হবে। দুই টিলার অচেনা দৃশ্য আপনার কল্পনাকেও হার মানাবে। মনে হবে এ যেন ক্যানভাসের উপর কোন বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর তুলির আঁচড়। সারা মারিশ্যা ভ্যালী যেন পায়ের কাছে এসে জড়ো হয়েছে। যে কোন পর্যটকের কাছে এ দৃশ্যটি আকর্ষনীয়।
মানিকছড়ি মং রাজবাড়িঃ
জেলার মানিকছড়ি উপজেলার মং সার্কেলের রাজার প্রাচীন রাজবাড়ি এবং রাজত্বকালীন স্থাপত্য খাগড়াছড়ি জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। রাজার সিংহাসন, মূল্যবান অস্ত্রশস্ত্রসহ প্রত্নতাত্ত্বিক অনেক স্মৃতি বিজড়িত এ রাজবাড়ি। যদিও সুষ্ঠু সংরক্ষণ, যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে হারিয়ে গেছে অনেক কিছু। মং রাজার ইতিহাস, সংস্কৃতি জানা ও দেখার জন্য ঘুরে যেতে পারেন মং রাজবাড়ি।

বন ভান্তের প্রথম সাধনাস্থলঃ
পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মীয় মহাসাধক আর্য পুরুষ, আর্য শ্রাবক বুদ্ধ সাধনানন্দ মহাস্থবির বন ভান্তে। তাঁর জন্ম রাঙামাটি সদর উপজেলার ধনপাতা গ্রামে। সাধনাস্থল দীঘিনালা। বন ভান্তের প্রথম সাধনাস্থলকে ঘিরে তৈরি হয়েছে ২০ একর ভূমির ওপর দীঘিনালা বন বিহার। এ বিহারে রয়েছে ২৩ ফুট উচ্চতার ধ্যানমগ্ন গৌতমবুদ্ধের মূর্তি, ১৩ ফুট উচ্চতার শিবলি মূর্তি, উপগুপ্ত বুদ্ধ (জলবুদ্ধ)সহ বিহার কমপ্লেক্সের স্থাপনা ও প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য। এ সাধনাস্থলকে ঘিরে গড়ে ওঠা পানছড়ি অরণ্য কুটির, পেরাছড়া বন বিহার দেখলে যেকোনো পর্যটকের মন জুড়িয়ে যাবে।
রামগড় লেক ও চা বাগানঃ
সীমানত্ম শহর রামগড় উপজেলা সদরে নান্দনিক সৌন্দর্যমন্ডিত কৃত্রিম লেক নানাদিক থেকে আনন্দ যোগায় পর্যটকদের। রামগড় সদরের খুব কাছেই বাগান বাজার এলাকায় পাহাড়ী পরিবেশে চা-বাগান ও পিকনিক স্পট। এখানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন আদিবাসী সাওঁতালরা। আগ্রহ করে জানা যাবে তাদের জীবন ও জীবিকা সম্পর্কে। চা-বাগানের অভ্যনত্মরে রয়েছে শাপলা ফোটা বিশাল প্রাকৃতিক লেক। কিছুদিন পর এ লেকে আসবে শীতের নানান জাতের অতিথি পাখি।
সূত্রঃ ওয়েব সাইট